<p>অনেকেরই হয়তো জানা নেই, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার নামকরণ হয়েছে সত্যিকারের একটি দীঘি থেকেই। ত্রিপুরা রাজা গোবিন্দ মাণিক্যের সময় খনন করা হয়েছিল এ জলাশয়। রাজা গোবিন্দ মাণিক্য স্বেচ্ছায় নির্বাসনে এসে সময় কাটিয়েছিলেন এ অঞ্চলে।</p> <p>উপজেলা সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে দীঘিনালা ইউনিয়নের বড়াদম এলাকায় দীঘিনালা-বাবুছড়া সড়কের পাশেই এই ঐতিহাসিক দীঘির অবস্থান। এটি চাকমা সার্কেলের আওতাধীন। ঐতিহাসিক এ দীঘি দেখতে অনেক পর্যটক ভিড় জমান এখন। দিন দিন তাঁদের সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে দীঘিটির সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন জরুরি বলে তাগিদ দিচ্ছেন স্থানীয়রা।</p> <p>দীঘিনালার ‘বাঘেইছুড়ি দুঅর চাঙমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’র পরিচালক আনন্দ মোহন চাকমা জানান, জনশ্রুতি রয়েছে, ত্রিপুরার মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য সংসার ছাড়ার পর এ অঞ্চলে কিছুদিন বসবাস করেছিলেন। তখন তাঁর সফরসঙ্গী ও স্থানীয়দের জন্য পানির ব্যবস্থা করতেই এই দীঘি খনন করা হয়েছিল।</p> <p>ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বড়াদম এলাকার এই দীঘি খনন করা হয়েছিল ১৬৬৫, মতান্তরে ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে। ত্রিপুরা মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্যের নির্দেশে রাতারাতি ছোট-বড় ১২টি দীঘি খনন করা হয়। পুরঞ্জন প্রসাদ চক্রবর্তীর ত্রিপুরা রাজমালা, কালীপ্রসন্ন সেনের শ্রীশ্রী রাজমালা, হিস্ট্রি অব হিন্দুস্তান-আলেক্সান্ডার ডাউ (তৃতীয় খণ্ড) এবং প্রভাংশু ত্রিপুরার ত্রিপুরা জাতির মাণিক্য উপাখ্যান। খননকৃত তুলনামূলকভাবে ছোট দীঘিগুলো কালের প্রবাহে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও বড় দীঘিটি এখনো অতীতের স্মৃতি বহন করছে। বড় এ দীঘিটির মোট আয়তন ৩.২০ একর। এর জলমগ্ন ও স্থলভাগ অর্ধেক অর্ধেক করে।</p> <p>ইতিহাস বলে, ত্রিপুরা মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য (১৬৬০-১৬৭৬) বৈমাত্রেয় ভাই নক্ষত্র নারায়ণের হাতে ত্রিপুরা রাজ্যের শাসনভার অর্পণ করে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যান। প্রথমে বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার মাইনি নদীর তীরে এসে একটি আশ্রম নির্মাণ করে বসবাস করতে থাকেন। তখন এ অঞ্চল ছিল ত্রিপুরা জনজাতির একটি বৃহৎ গোত্র রিয়ংদের আবাসস্থল। এ থেকেই অতীতে এ অঞ্চলের নাম ছিল রিয়াং দেশ। রিয়াং সম্প্রদায়ের লোকজন মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্যের দর্শন পেতে সমবেত হলে রাজা একটি দীঘি খননের নির্দেশ দেন। মহারাজার আগমনের স্মৃতিরক্ষার্থে রাতারাতি ওই দীঘি খনন করা হয়। এর পর থেকেই এলাকাটির নাম হয় মহারাজার দীঘি। পরে পরিচিত হয়ে ওঠে দীঘিনালা নামে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন দীঘিনালা ইউপির চেয়ারম্যান প্রজ্ঞান জ্যোতি চাকমা কালের কণ্ঠকে জানান, ঐতিহ্যবাহী এ দীঘিটির ঐতিহ্য রক্ষায় এর সৌন্দর্যবর্ধন ও সংস্কার জরুরি প্রয়োজন। চেয়ারম্যান জানান, এ বিষয়ে তিনি চাকমা রাজা (সার্কেল চিফ) দেবাশীষ রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।</p> <p> </p> <p> </p>