পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, শিল্পায়ন হবে, বিনিয়োগ বাড়বে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এই অঞ্চলে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন খাতের প্রসার ঘটবে। এককথায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হবে খুলনা। এমনটাই মনে করছে খুলনার ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতু চালু হলে যাতায়াতব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। মূলত যোগাযোগব্যবস্থার কারণেই এত দিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় তেমন বিনিয়োগ ছিল না। জ্বালানির সুযোগ ছিল না, নতুন শিল্প-কলকারখানা তেমন গড়ে ওঠেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেসব শিল্প-কলকারখানা ছিল, তা একে একে বন্ধ হয়ে কাজের সুযোগ কমে আসছিল। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে কর্মসংস্থানমুখী বড় কোনো উদ্যোগ ছিল না। এই অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য (মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, কুঁচে প্রভৃতি) শিল্পেও বিনিয়োগ অনেকটা স্থবির ছিল। সেতু উদ্বোধন হলে এই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে, এমন প্রত্যাশা সবার।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কাজী আমিনুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, সেতু চালু হলে খুলনাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলার গতিশীলতা বাড়বে। সেতু নির্মাণের পর পায়রা বন্দরের গুরুত্ব বাড়বে। আর এর সব কিছুর কেন্দ্রে থাকবে খুলনা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু হলে ঢাকার সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগের ফলে এ অঞ্চলের উৎপাদিত কাঁচামাল দ্রুততার সঙ্গে সরবরাহের সুযোগ তৈরি হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে এবং যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে।
সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি দুটিই হবে। এ অঞ্চলের কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্প সময়ে এবং অল্প খরচে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাবেন। চিংড়ি রপ্তানি সহজতর হবে। এবারে তরমুজ চাষিরা শুধু পরিবহনের কারণে ভালো দাম পাননি, অনেকেই লোকসান দিয়েছেন; এর অবসান ঘটবে।
সেতু হলে এই অঞ্চলের পর্যটন ব্যবসা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। পর্যটন ব্যবসায়ী নাজমুল আযম ডেভিড বলেন, ‘সেতু চালু হলে পর্যটন ব্যবসার প্রসার ঘটবে বলে আমরা আশাবাদী। বিশেষত সুন্দরবন, কুয়াকাটাকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে। তবে এই খাতটি বিকাশের একটি অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে একটি সুষম অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং পর্যটকদের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ’
পদ্মা সেতু ঘিরে খুলনা-ঢাকা, সাতক্ষীরা-ঢাকা পথে এরই মধ্যে বিলাসবহুল বাস চলাচলের প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। গ্রিন লাইন পরিবহন খুলনার ব্যবস্থাপক আইয়ুব হোসেন জানান, বর্তমানে ইকোনমি শ্রেণির চারটি গাড়ি খুলনা-মাওয়া-ঢাকা রুটে চলাচল করে। ভাড়া হিসেবে প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে এক হাজার টাকা নেওয়া হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে ভাড়া কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে ইকোনমি শ্রেণিতে ভাড়া হবে ৭৫০ টাকা। তিনি আরো জানান, সেতু চালু হলে ডাবল ডেকার ও বিজনেস ক্লাসের মতো গাড়ি খুলনায় চলাচল করবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি সিটের ভাড়া এক হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ গাড়িগুলো আগামী ২৩ জুনের মধ্যে খুলনা নগরে প্রবেশ করবে।
সংস্কৃতিকর্মী শরিফুল ইসলাম সেলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়াটা ছিল খুব ঝক্কির। এখন দিনে দিনে ঢাকা থেকে ফিরে আসতে পারব, এটাই বড় আনন্দের। ’