গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে নৃশংস হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হাই। বারবার ঠিকানা পরিবর্তন করে প্রায় ১৭ বছর ধরে দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে’র (হুজি-বি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও আমির ছিলেন আবদুল হাই।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল হাইয়ের বিষয়ে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, আবদুল হাই রমনার বটমূলে বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। দেশে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিতে ১৯৯২ সালে উখিয়ায় প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেন তিনি। পাশের দেশের এক জঙ্গি নেতা অস্ত্র সরবরাহ করতেন তাঁর কাছে। আবদুল হাইসহ তিনজন সেখানে প্রশিক্ষণ দিতেন। প্রায় চার বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৬ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ওই শিবির থেকে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটালীপাড়ায় জনসভার অদূরে আবদুল হাই ও তাঁর সহযোগীরা ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট মুফতি আবদুল হাইসহ ১০ জন মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
খন্দকার আল মঈন আরো জানান, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন। এই মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন আবদুল হাইসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি আবদুল হাই। এ ছাড়া ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরে বৈদ্যের বাজারে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়।
যেভাবে ১৭ বছর আত্মগোপনে
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন জঙ্গিবাদী ঘটনার সঙ্গে হুজি-বির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ২০০৬ সালের পর মুফতি আবদুল হাই আত্মগোপনে চলে যান। তাঁর পরিবার তখনো নারায়ণগঞ্জেই বসবাস করতেন, কিন্তু তিনি কুমিল্লার গৌরীপুরে শ্বশুরবাড়ী এলাকায় আত্মগোপন করেন। গৌরীপুর বাজারে তাঁর শ্বশুরের কেরোসিন ও সয়াবিন তেলের ডিলারশিপের ব্যবসা ছিল, তিনি সারা দিন ব্যবসা দেখাশোনা করে ওই দোকানেই রাত কাটাতেন।