গত ২৮ মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৬৭৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী অবস্থায় নিহত হয়েছে ৩৩১ শিশু, যা মোট নিহতের ১৯.৭৭ শতাংশ। রাস্তা পারাপার ও রাস্তা ধরে হাঁটার সময় যানবাহনের চাপায় নিহত হয়েছে এক হাজার ২৭ শিশু, যা মোট নিহতের ৬১.৩৫ শতাংশ। পণ্যবাহী যানবাহনের চালক ও সহকারী হিসেবে নিহত হয়েছে ৪৮ শিশু।
বিজ্ঞাপন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থাটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
যানবাহনের চাপায় শিশু নিহতের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পণ্যবাহী যানবাহনের চাপায় নিহত হয়েছে ২৫৮ শিশু। বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুল্যান্সের চাপায় ১৪৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের চাপায় নিহত হয়েছে ২০৮ শিশু। বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৯৭ শিশু। আর সবচেয়ে বেশি তিন চাকার গাড়ির চাপায় ৩২১ শিশু নিহত হয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, দুর্ঘটনায় মহাসড়কে ২৮৭ শিশু, আঞ্চলিক সড়কে ৩২৮ শিশু, গ্রামীণ সড়কে ৮৮৯ শিশু, শহরের সড়কে ১৪৭ শিশু এবং অন্যান্য স্থানে ২৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনায় বেশি মৃত্যু হয়েছে সকালে ৫১.৭৯ শতাংশ, এরপর বিকেলে ২২.৪৬ শতাংশ। নিহত শিশুদের মধ্যে এক মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী রয়েছে ৩৩৭ জন। ছয় বছর থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৭৫৪ জন। ১৩ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী ৫৮৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলেছে, দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব না হওয়া; সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের মধ্যে সচেতনতার অভাব; পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ না দেওয়া; অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের যানবাহন চালানো; দুর্ঘটনায় আহত শিশুদের উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট এবং আহত শিশুদের চিকিৎসায় পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার সময় ৭৩১ শিশু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। বসতবাড়ির আশপাশের সড়কে খেলাধুলার সময় নিহত হয়েছে ১৯৩ শিশু। ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসতঘরের ওপর উল্টে পড়ার তিনটি ঘটনায় রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সাত শিশুর মৃত্যু হয়।
এসব দুর্ঘটনা কমাতে, সড়ক ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা শিশুদের জন্য নিরাপদ করা; জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার সুযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ সরকারি তহবিল গঠন করাসহ ছয়টি সুপারিশ দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।