মানিক সাহা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজ্য শাখার সভাপতি মানিক সাহা। গতকাল শনিবার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আকস্মিকভাবে ইস্তফা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই কেন্দ্রীয় বিজেপির সূত্র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মানিকের মনোনয়নের খবর দেয়।
বিপ্লব দেব গতকাল বিকেলে রাজ্যপাল সত্যদেব নারায়ণ আর্যের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন। রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র বছরখানেক আগে তিনি পদ ছাড়লেন।
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালের ৯ মার্চ বিপ্লব দেব ত্রিপুরায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হন। ওই সময় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন দুই দশকের বেশি সময়ের বামপন্থী সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। বিপ্লব টানা দুই দশকের মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিআইএমের বর্ষীয়ান নেতা মানিক সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় বসেন।
বিজেপি সূত্র জানায়, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিপ্লবের পদত্যাগের আগেই মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য ঠিক করে রেখেছিল।
পেশায় চিকিৎসক মানিক সাহা বর্তমানে ভারতীয় আইনসভার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য। সেখানকার সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার দুই মাস পূর্ণ না হতেই তাঁকে রাজ্য সরকারের শীর্ষ পদের জন্য নির্বাচিত করল দল। মাত্র ২০১৬ সালে রাজনীতিতে নামা মানিক সাহার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসা অনেকের কাছেই চমকে দেওয়া ঘটনা। বিদায়ি মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মানিক সাহা ২০২১ সালে ত্রিপুরা বিজেপি প্রদেশ কমিটির সভাপতি হন।
বিধি অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে মানিক সাহাকে বিধায়ক পদে নির্বাচনে জয়লাভ করে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যসভার সদস্য পদ ত্যাগ করতে হবে তাঁকে।
বিপ্লব দেব গত বৃহস্পতিবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করেন। এর পরই গতকাল পদত্যাগ করেন তিনি। রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বর্তমান উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব বর্মা ও মানিক সাহার নাম শোনা গিয়েছিল। শেষমেশ মানিকই দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।
‘অন্তঃকলহের’ ইঙ্গিত
তড়িঘড়ি করে ডাকা বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকের পর বিপ্লব দেব নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মানিক সাহার নাম ঘোষণা করেন। রাজ্যের বিজেপি সদর দপ্তরে এ নিয়ে নাটকীয় দৃশ্যের খবর পাওয়া গেছে। মন্ত্রী রাম প্রসাদ পাল এই প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে বিধায়কদের মধ্যে উত্তপ্ত তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে রাম প্রসাদ পাল কয়েকটি চেয়ার ভেঙে ফেলেন। তাঁর মেঝেতে চেয়ার বাড়ি দেওয়ার এবং চিৎকার করার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। রাম প্রসাদ পাল পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ত্রিপুরা রাজপরিবারের সদস্য উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব বর্মাকে চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
তৃণমূলের খোঁচা
এদিকে ত্রিপুরা রাজ্যে বিজেপির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেস বিপ্লব দেবের ওপর আক্রমণ শানিয়েছে এই বলে যে এমনকি বিজেপির নেতারাও ‘তাঁর অযোগ্যতায় বিরক্ত’। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভি