<p>সূত্রহীন মামলার ছায়া তদন্তে গ্রেপ্তার হওয়া এক যুবক জিজ্ঞাসাবাদে দুই নারীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এই যুবককে ‘ক্রমিক খুনি’ (সিরিয়াল কিলার) বলে সন্দেহ করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।</p> <p>কুমিল্লার দাউদকান্দির আবদুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্না (২৩) নামের ওই যুবককে গত রবিবার কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুন্না প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর নারীদের হত্যা করছিলেন। তিনি প্রেমের অভিনয় করে দুই নারীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পিবিআই কুমিল্লা। এই দুটি হত্যার ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ সূত্রহীন (ক্লুলেস)।</p> <p>পিবিআইয়ের সদস্যরা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একটি হত্যা মামলায় মুন্নাকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর কাছে আরেকটি হত্যাকাণ্ডের তথ্য পান। জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না জানান, আরো তিন নারীকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। ওই তিন নারীর সঙ্গেও মুন্না সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।</p> <p>পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মুন্না ধরা না পড়লে কিছুদিনের মধ্যে আরো একাধিক নারী হত্যার শিকার হতেন। মুন্না স্বীকার করা দুটি হত্যাকাণ্ডের বাইরে আরো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে পিবিআই।</p> <p>হত্যাকাণ্ডের শিকার দুই নারীর মধ্যে একজন দাউদকান্দির বানিয়াপাড়া গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে পান্না আক্তার (২৮)। তিনি সাত ও আড়াই বছর বয়সী দুই পুত্রসন্তানের জননী। গত ২৪ অক্টোবর পান্না আক্তারকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ বিকৃত করে বস্তায় ভরে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানার গোপিনাথপুর এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়।</p> <p>আরেক নারী কুমিল্লা সদর উপজেলার আমতলী গ্রামের সফিকুল ইসলামের মেয়ে লাইলী বেগম রিমা (২৬)। তিনি এক পুত্রসন্তানের জননী। গত ২ সেপ্টেম্বর হত্যার পর একইভাবে মরদেহ বিকৃত করে বস্তায় ভরে ফেনী সদরের শর্শদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়।</p> <p>গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ, পুলিশ পরিদর্শক বিপুল চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ।</p> <p>লিখিত বক্তব্যে মিজানুর রহমান বলেন, ‘পান্না আক্তারের হত্যার ঘটনায় গত ২৫ অক্টোবর সদর দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার মামলা হলে আমরা মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করি। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত রবিবার ‘সিরিয়াল কিলার’ মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন রাতে গ্রেপ্তার করা হয় মুন্নার সহযোগী দ্বীনুকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।</p> <p>ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে মুন্নার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে লাইলী বেগম রিমার মোবাইল নম্বরের যোগসূত্র পাওয়া যায়। লাইলীর পরিবার আদালতে একটি অপহরণ মামলা করেছিল। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ফেনী সদর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশও একটি হত্যা মামলা করে। কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না দুটি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। গত সোমবার আদালতে মুন্না ও তাঁর সহযোগী দ্বীনু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’</p> <p>স্বীকারোক্তিতে মুন্না জানান, হত্যার দুই মাস আগে পান্নার সঙ্গে মোবাইলে পরিচয় হলে তাঁরা পরস্পর কথা বলার পাশাপাশি দেখা করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠলে বিয়ের প্রলোভন দেখালে গত ২৪ অক্টোবর স্বামীর সংসার ছেড়ে মুন্নার কাছে চলে আসে পান্না। এরপর নগরীর ভাড়া বাসায় নিয়ে পান্নাকে ধর্ষণের পর স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা লুট করে হত্যা করে মুন্না। লাশ বস্তায় ভরে সহযোগী দ্বীনুর মাইক্রোবাসে করে গোপিনাথপুরে ফেলে আসে।</p> <p>একইভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর লাইলী বেগমকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঝাগরজুলি এলাকা থেকে সহযোগীর মাইক্রোবাসে তুলে নেন মুন্না। একই কায়দায় তাঁকেও হত্যার পর লাশ ফেনীতে ফেলে আসা হয়।</p> <p>আবদুল্লাহ আনসারী জেলার দাউদকান্দি উপজেলার বরকোটা ভূঁইয়া বাড়ির রিকশাচালক শহীদুল্লাহ ভূঁইয়ার ছেলে। তাঁর মা ঝর্ণা বেগম মারা যান প্রায় ২০ বছর আগে। ছোটবেলা থেকে মুন্না কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন মানুষের আশ্রয়ে বড় হয়েছে। বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। সর্বশেষ কুমিল্লা নগরীর পুলিশলাইন এলাকায় একটি ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারী ছিলেন তিনি।</p> <p>মুন্নার সহযোগী দ্বীন ইসলাম দ্বীনু (১৯) মাইক্রোবাসচালক। তিনি কুমিল্লা সদরের দুর্গাপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে। তাঁর গাড়িতে করেই লাশগুলো ফেলা হয়েছে।</p> <p> </p> <p> </p>