<p>মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ তুলে পটুয়াখালীর গলাচিপায় এক শিশুকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি। এ সময় কাঁচি দিয়ে ভুক্তভোগীর মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয় ওই শিশুর বাবাকে। তখন শিশুটির মা এগিয়ে এলে তাঁকেও পেটানো হয়। আর এসব ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ফেসবুকে। গত শুক্রবার সকালে উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের ফুলখালী গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে। পরে মামলা হলে ফেসবুক থেকে ভিডিওটি মুছে ফেলা হয়। এ ঘটনায় সোহেল মৃধা (৩৮) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।</p> <p>ওই শিশু ডাকুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর গ্রামের মকবুল গাজী-মোর্শেদা বেগম দম্পতির সন্তান। ঘটনার পরে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলখালী গ্রামের জুয়েল মৃধা, রাকিব মৃধা, সোহেল মৃধাসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অচেনা আরো তিনজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন শিশুটির মা মোর্শেদা। তবে আসামিরা হুমকি দেওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগীরা।</p> <p>মামলার এজাহার অনুযায়ী, মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার সকালে শিশুটিকে ঘর থেকে ডেকে নেয় ফুলখালীর জুয়েল মৃধা। এরপর ফুলখালীর রেজাউল মৃধার বাড়ির সামনে শিশুটিকে আমগাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। তিন ঘণ্টা ধরে পৈশাচিক নির্যাতন চালায় জুয়েল মৃধা, রাকিব মৃধা, সোহেল মৃধা, এমাদুল মৃধা, জাকির মৃধাসহ অচেনা আরো দুই-তিনজন। এক পর্যায়ে শিশুটির বাবাকেও ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনা হয়। গলায় গামছা পেঁচিয়ে ছেলের পাশে রেখে তাঁর ওপরও নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে বাবা মকবুল গাজী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন মা মোর্শেদা বেগম ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তাঁকেও পেটানো হয়। এ সময় মোর্শেদার চাচা স্থানীয় রুহুল মোল্লা এসে শিশুটির বাঁধন খুলে দিলে তাঁকেও অপমান করা হয়।</p> <p>ডাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আরিফ মিয়া বলেন, ‘শিশুটির বাড়ি আমার ওয়ার্ডে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ নম্বরের মেম্বরকে খবর দিতে বলি। বিষয়টি আইনিভাবে মীমাংসার কথা বলেছিলাম।’</p> <p>৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাকিব মোল্লা বলেন, ‘আমি এলাকায় ছিলাম না। আমাকে ফোনে জানানো হলে দফাদারকে বলতে বলেছি। কিন্তু কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে বলা হয়নি।’</p> <p>নির্যাতনের শিকার শিশুটির ভাষ্য, ‘আমারে ঘর দিয়া রেজাউল মৃধা ডাইক্কা নেয়। রাস্তায় উঠলে আমার পকেটে তার একটা মোবাইল ঢুকাইয়া দেয়। এরপর রেজাউল মৃধার বাড়ি নিয়া বলে ‘চোর পাইছি’। তারপর এমাদুল মৃধা, রাকিব মৃধা, সোহেল মৃধাসহ কয়েকজন মিল্যা (মিলে) একটি গরুর দড়ি দিয়া আমগাছের লগে বাইন্দা আমারে বাঁশের লাডি দিয়া পিডাইছে। হেরা (তারা) লোয়ার (লোহা) রড দিয়া চোখ উডাইয়া দেওয়ার ভয় দেহাইছে।’</p> <p>শিশুটির মা মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘রেজাউল ও জুয়েল মৃধাসহ চার-পাঁচজনে আমার ছেলেকে ঘর থেকে ডাইক্কা (ডেকে) নেয়। রেজাউল মৃধার বাড়িতে নিয়ে আমার পোলারে আমগাছের লগে (সঙ্গে) হাত-পা বাইন্দা পিডাইছে। এর কিছু পরেই আমার স্বামী মকবুল গাজীকে মৃধাবাড়ির জুয়েল মৃৎধা ও রাকিব মৃধা গলায় গামছা পেঁচিয়ে নিয়ে যায়। বাপ-পোলারে একখানে কইরা পোলার সামনেই নির্যাতন করে এবং আমার পোলার মাথার চুল কেচি (কাঁচি) দিয়ে কাইট্টা দেয়। আমার স্বামীকে উদ্ধার করতে গেলে আমারেও মারধর করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি যহন থানায় মামলা করতে যাই তহন আমার বাড়িতে যাইয়া আত্মীয়-স্বজনের কাছে হুমকি দিয়ে আসে। আমি ভয়তে আছি।’</p> <p>গলাচিপা থানার ওসি এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘শিশুটির মা মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এরই মধ্যে আসামি সোহেল মৃধাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’</p>