<p>লক্ষ্মীপুর ছেড়ে রঙের শহর ঢাকায়। উদ্দেশ্য তদবির! স্বপ্ন একটি মার্কা। সকালে এক কেন্দ্রীয় নেতার দেখা মেলে তো বিকেলে আরেক নেতার ছায়াও মাড়ানো যায় না। এই বুঝি ছুটে গেল! মনে বাসা বাঁধে অতৃপ্তি। সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা-রাত নেতার সামনে নিজেকে জাহিরের প্রতিযোগিতায় নেমে কেউ কেউ নাওয়া-খাওয়া ভুলতে বসেছেন। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) এরই মধ্যে বাজিয়েছেন ভোটের ঘণ্টা। হাতে সময় খুব কম। তাই আলোচিত লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা চূড়ান্ত কৌশল নিয়ে এখন মাঠে। শেষ সময়ে খুঁজছেন তদবিরের নানা ফন্দি।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলের নীতিনির্ধারকসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের অফিস ও বাসায় গিয়ে নিজের সাফাই গাইছেন। একই সঙ্গে দলের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পাপুলকাণ্ডে জড়িতসহ নানা সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেক সমর্থক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রিয় নেতার ছবিসংবলিত পোস্টার আপলোড করে জনগণের সমর্থন ও দোয়া চাইছেন। অনেকে নিজের পছন্দের নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েও নজরে আসার চেষ্টা করছেন। দু-একজন নেতা নিজস্ব সমর্থক নিয়ে ঢাকায় উঠেছেন বলেও তথ্য মিলেছে।</p> <p>কুয়েতে মানবপাচার ও অর্থপাচারের মামলায় এ আসনের স্বতন্ত্র এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সাজা হওয়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত বুধবার উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১১ এপ্রিল ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ফরম সংগ্রহ করছেন। আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত ফরম সংগ্রহ করা যাবে।  </p> <p>প্রথম দিন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, চট্টগ্রাম এক্স শাহীন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুল বাকীন ভূঁইয়া ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। এই চারজনই ফরম সংগ্রহের বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।</p> <p>দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকা প্রতীক পেতে মনোনয়ন লড়াইয়ে নেমেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জেলা কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. এহসানুল কবির জগলুল ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপপরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটওয়ারী। তাঁদের পক্ষে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আলাদাভাবে ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দাবি তুলছেন। তাঁকে সমর্থনের বিষয়টি ফেসবুকে স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয়েছে।</p> <p>গত বৃহস্পতিবার রায়পুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাসেল ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘লক্ষ্মীপুর-২ আসনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নাম বিক্রয়কারী কাউকে আমরা প্রার্থী চাই না। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের পাশে থাকা যে কাউকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই।’</p> <p>এদিকে এই উপনির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এম আর মাসুদ ও নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠু দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। জাপা নেতা মিঠু রায়পুরের সন্তান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ আসন থেকে দুবার নির্বাচন করে এমপি হয়েছিলেন। যদিও পরে উপনির্বাচনে তিনি আসনটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তখন থেকে এ এলাকা ‘খালেদার ঘর’ হিসেবে পরিচিত।</p> <p>আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপার সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে তাঁরা ঢাকায় অবস্থান করছেন। দলীয় মনোনয়ন বাগাতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাসা ও ব্যক্তিগত অফিসে তাঁরা লবিং করছেন। তবে করোনার কারণে বেগ পেতে হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী।</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সমর্থক এক শিক্ষক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এমপি হতে যাঁরা তদবির করছেন, তাঁদের অনেকেই পাপুলের এমপি বনে যাওয়াসহ রহস্যজনক রাজনৈতিক উত্থানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারাও আছেন। তৃণমূল থেকে রাজনীতি করা, সব সময় এলাকায় থাকেন এমন ব্যক্তিকে আমরা এমপি হিসেবে দেখতে চাই।’</p> <p>এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে আমি সুসংগঠিত করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি সুফল জনগণের মাঝে সুষমভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতা ও মানবিক কর্মকাণ্ডে দিন দিন আওয়ামী লীগের জনসমর্থন বাড়ছে। এখন দলের নেতাকর্মীরা আমাকে এমপি মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর আমার শতভাগ আস্থা রয়েছে।’</p>