<p>সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকায় গতকাল বুধবার দুপুরে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে তিন কাউন্সিলরসহ নগর সংস্থার কমপক্ষে আটজন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় অর্ধশতাধিক গাড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় অস্ত্রসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।</p> <p>এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দুপুর ২টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে শত শত গাড়ি আটকে পড়ে। পরে পুলিশের চেষ্টায় দুই ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা। পরে গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকরা। জেলা বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সভা শেষে এই ঘোষণা দেন তাঁরা।</p> <p>সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা যায়, নগরের বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের পর বর্তমানে চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। এই সড়কের চৌহাট্টা-দরগাহ এলাকার ফুটপাত ও সড়কের অনেকাংশ দখল করে অনেক দিন ধরেই পরিবহন শ্রমিকরা মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছেন। প্রতিদিন সেখানে শতাধিক গাড়ি পার্ক করা থাকে।</p> <p>চার দিন আগে এ অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে যায় সিলেট সিটি করপোরেশন। মেয়রের নেতৃত্বে এ অভিযানে বাধা দেন পরিবহন শ্রমিকরা। পরে তাঁদের তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে এই সময়ের মধ্যে ফুটপাত ও সড়ক ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন মেয়র।</p> <p>সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা জানায়, গতকাল সকালে চৌহাট্টা এলাকায় সড়কের উন্নয়নকাজ শুরু করা হলে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখান। খবর পেয়ে দুপুরে কাউন্সিলর, সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে উন্নয়নকাজ পরিদর্শনে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গাড়ি পার্ক করে রেখেছিলেন। এ সময় মেয়রসহ সিসিকের কর্মকর্তারা সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে চাইলে পরিবহন শ্রমিকরা বাধা দেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালান পরিবহন শ্রমিকরা।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, পরিবহন শ্রমিকদের হামলার পরপরই সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও পাল্টা হামলা চালান। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পুলিশের ওপরও হামলা চালান শ্রমিকরা। এ সময় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকা অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের কারণে চৌহাট্টা-আম্বরখানা, চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার, চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা-মিরবক্সটুলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আধাঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ১৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ফয়সল আহমদ ফাহাদকে (৩৮) একটি বন্দুকসহ আটক করে পুলিশ।</p> <p>সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ বলেন, ‘মেয়র, কাউন্সিলর ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা আচমকা হামলা চালায়। এ সময় তিনজন কাউন্সিলরসহ সিসিকের কমপক্ষে আটজন আহত হন। তিনি বলেন, হামলার এক পর্যায়ে বন্দুক নিয়ে একজন মেয়রের দিকে তেড়ে আসে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করে।’</p> <p>এ ঘটনার ব্যাপারে পরিবহন শ্রমিকদের কেউ কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এ এলাকায় স্ট্যান্ড করে আছি। উচ্ছেদের আগে আমাদের বিকল্প একটি জায়গা দেওয়ার জন্য মেয়রের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি তা না করে উচ্ছেদ করতে চাচ্ছেন।’</p> <p>সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি এস এম আবু ফরহাদ বলেন, পুলিশ আধাঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই সময় ১৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।</p> <p>এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে বিদ্যুৎ লাইন অপসারণ, ফুটপাত সংস্কার ও সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এই কাজ শেষের পথে। চৌহাট্টা এলাকায় যখন ফুটপাতের কাজ শুরু করেছিলাম, তখন অবৈধ স্ট্যান্ড সরাতে বলেছিলাম। কিন্তু শ্রমিকরা বারবার টালবাহানা করছিল। শেষমেশ আমরা সময় দিয়েছিলাম। তারা পার্কিংয়ের জন্য আলাদা জায়গা চেয়েছে। আমি তাদের নগরের ভেতর খালি জায়গা খুঁজতে বলেছি। কিন্তু আজ (বুধবার) সকালে হঠাৎ করে তারা সড়কের উন্নয়নকাজ বন্ধ করে দেয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে জানাই। পরে কাউন্সিলর, ম্যাজিস্ট্রেট ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে এখানে আসি। এখানে আসার পর তারা আচমকা হামলা চালায়। এতে তিনজন কাউন্সিলরসহ সিটি করপোরেশনের আটজন আহত হয়েছেন।’</p> <p><strong>কক্সবাজারে হামলায় প্যানেল মেয়র আহত </strong></p> <p>কক্সবাজার থেকে বিশেষ প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার শহরে ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকচালকদের সঙ্গে পৌর কর্মচারীদের সংঘর্ষে পৌর প্যানেল মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমানসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে।</p> <p>কক্সবাজারের পৌর কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন জানান, ট্রাফিক পুলিশ কক্সবাজার শহরে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অবৈধ ইজি বাইক জব্দ করে। এর প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে শহরে ইজি বাইক চলাচল বন্ধ করে দেয় ইজি বাইক চালক সমিতি। সকাল থেকে তারা শহরে ইজি বাইক জব্দের প্রতিবাদে মিছিল বের করে।</p> <p>এক পর্যায়ে ইজি বাইক চালক সমিতির সদস্যরা কক্সবাজার পৌর কার্যালয়ের সামনে এসে বিক্ষোভ করেন। এ সময় প্যানেল মেয়র মাহবুবুর রহমান ইজি বাইক চালক সমিতির নেতাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।</p> <p>এ সময় চালক সমিতির একটি পক্ষ প্যানেল মেয়রের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। হামলার ঘটনায় পৌর কর্মচারীরা তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ জানালে ইজি বাইকচালকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে আরো চারজন আহত হন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।</p> <p> </p>