হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় তানভীর আহমেদ (১৫) নামের দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে গত রবিবার অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিজ গ্রামের একটি পুকুর থেকে ছাত্রটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
তানভীর শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম নসরতপুর গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে এবং স্থানীয় আফরাজ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিম নসরতপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর বাড়ির পুকুর থেকে তানভীরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সৈয়দ আলীর ছেলে উজ্জল মিয়া (২৫), নুরপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬) ও বাছিরগঞ্জ বাজারের জলিল কবিরাজের ছেলে জাহিদ মিয়াকে (২৮) আটক করেছে পুলিশ।
গত রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তানভীরকে ফোন করে আটক ব্যক্তিরা বাড়ি থেকে নিয়ে যান। তানভীরের ফোন নম্বর থেকে ঘণ্টা দেড়েক পরে তার বাবা ফারুক মিয়াকে ফোন করা হয়। তাঁকে বলা হয়, ‘তোমার ছেলেকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। ৮০ লাখ টাকা না দিলে মেরে ফেলা হবে।’ ওই রাতেই তানভীরের বাবা, ধান-চাল ব্যবসায়ী ফারুক শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন।
মঙ্গলবার ভোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম পিপিএমের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করার পর
তাঁদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে ফারুক মিয়া ও তাঁর স্ত্রী উজ্জলা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তানভীরের একটি বোন রয়েছে। তাঁর বিয়ে হয়েছে। গত রাত ১০টায় তানভীরকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব জানান, তানভীরের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, পরিকল্পিতভাবে তানভীরকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, চাঁদা চাওয়ার আগেই তাঁরা তানভীরকে হত্যা করেন। এরপর ঘটনাস্থল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে চুনারুঘাটে গিয়ে তানভীরের ফোন থেকে তার বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণ চান। তিনি বলেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরো জানান, আটককৃতদের মধ্যে উজ্জল দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। পুলিশকে তিনি জানান, ছয় বছর আগে তাঁর বাবা সৈয়দ আলীকে এক চুরির বিচারে তানভীরের বাবা ফারুক মিয়া অপমান করেছিলেন। ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে পুলিশ ঘটনাটি আরো যাচাই-বাছাই করে দেখছে।
মন্তব্য