রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে ১৫ ডিসেম্বর থেকে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশন ও বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন। তারা বলেছে, বিগত বছরগুলোতে আখের দাম দ্বিগুণ করা হলেও চিনির দাম বাড়ানো হয়নি। একটি কুচক্রীমহল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর মধ্যেই চিনিকল বন্ধের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য মহলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিনিকলের লোকসান ও উৎপাদন খরচের মনগড়া তথ্য তুলে ধরেছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় স্বাধীনতা হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠন দুটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে তাঁরা আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন দেশের সব চিনিকলের মিল গেট এলাকায় দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছেন। ৯ ডিসেম্বর প্রতিটি চিনিকল এলাকায় মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠিসহ স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান, চিনিশিল্প করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক, প্রথম সহসভাপতি খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী বাদশা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চিনি শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা ভুল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন খরচ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দেখিয়ে সরকারপ্রধানকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। প্রকৃতপক্ষে চিনির উৎপাদন খরচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কিন্তু চিনিশিল্পের প্রধান কাঁচামাল উৎপাদনকারী আখচাষিরা চুক্তিবদ্ধ চাষি হিসেবে ঋণ নিয়ে এ পর্যন্ত সুদসহ ঋণের ৯৯.৯৯ শতাংশ (প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা) পরিশোধ করলেও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ না করে নানা কাজে ব্যবহার করেছে। ফলে দিন দিন ব্যাংকঋণ বেড়েছে। এর দায় কোনোভাবেই আখচাষি কিংবা শ্রমিক-কর্মচারীদের ওপর বর্তায় না। এ ছাড়া বিদেশ থেকে বেশি দামে চিনি কিনে এনে তা কম দামে বিক্রি করার কারণে দুই হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এ রকম মাথাভারী প্রশাসন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় চিনিশিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এসব সমস্যা দূর না করে চিনিকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হবে বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করা।
সংবাদ সম্মেলনে আখচাষি ফেডারেশনের নেতা শাহজাহান আলী বাদশা লিখিত বক্তব্যে সরকারের কাছে আগামী মাড়াই মৌসুমে ১৫টি চিনিকলের মাড়াই অব্যাহত রাখার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘ছয়টি মিলের আখ মাড়াই বন্ধ করা হলে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারাবেন এবং লাখ লাখ চাষি আখ চাষ করা থেকে বঞ্চিত হবেন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
পঞ্চগড়-১ আসনের সংদস সদস্য ও চিনিকল আখ চাষি ফেডারেশনের সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান বলেন, ‘ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ করলে কৃষকরা আখ চাষ করবেন না। আর আখ না থাকলে এমনিতেই মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বেন হাজার হাজার শ্রমিক। আমরা এটা হতে দিতে পারি না। একবার কোনো মিল বন্ধ হলে সেটি আর চালু হয় না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের চিনিকলে উৎপাদিত চিনি স্বাস্থ্যসম্মত। এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটাকে সঠিকভাবে বাজারজাত করতে হবে। চিনিকলের লোকসানের বিষয়ে সরকারকে একটি মহল ভুল বুঝিয়ে এ থেকে সুবিধা নিতে চাচ্ছে।’
চিনি শিল্প করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, আধুনিকতার নামে চিনিকল বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না। চিনিকল চালু রেখেই একে আধুনিক মানের করতে হবে। পুরনো যন্ত্রপাতি মেরামত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হলে এসব কারখানার উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে। আখ থেকে চিনি আহরণের মাত্রাও বাড়বে। কেরু অ্যান্ড কম্পানির মতো প্রতিটি চিনিকলেই ভিনেগারসহ অন্য পণ্য উৎপাদনে জোর দিতে হবে।
মন্তব্য