<p>হারিয়েছিলেন প্রায় ১৮ বছর আগে। এরপর অনাথ আশ্রমে সুমির কেটেছে গুনে গুনে ১৪ বছর। পরে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের সহায়তায় পান চাকরি। এরই মধ্যে বিয়েও করেছেন। স্বামীও পেয়েছেন একই দপ্তরে চাকরি। কিন্তু সেই সুমি খাতুনের মন পড়ে থাকত তাঁর হারিয়ে যাওয়া মা-বাবার কাছে। দেড় বছর আগে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদই সুমির হারানো মা ও সত্বাবাকে খুঁজে পাওয়ার যোগসূত্র হয়ে ওঠল।</p> <p>সুমি যখন হারিয়ে যান, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র চার বছর। এখন ২২। ২০০১ কিংবা ২০০২ সালের দিকে রাজশাহী শিশু সদনের সামনে কে বা কারা তাঁকে ফেলে রেখে যায়। এরপর শিশু সদনেই কাটে তাঁর তিন বছর। সেখান থেকে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা)। এরপর সেখানে কাটে আরো ১১টি বছর। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এই শিশু পরিবারে থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি বেড়ে ওঠেন সুমি। ২০১৮ সালে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে অফিস সহায়কের চাকরিও পান তিনি। ওই বছরই জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে একই কার্যালয়ের আরেক অফিস সহায়ক মঞ্জুরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়েও দেওয়া হয় সুমির।</p> <p>এসব নিয়ে গত বছরের ৯ জানুয়ারি কালের কণ্ঠ একটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর সেই সংবাদের সূত্র ধরে দুই দিন আগে সুমির পরিবারের লোকজন অবশেষে খুঁজে পায় সুমিকে।</p> <p>সুমির মা ময়না বিবি জানান, সুমির বয়স যখন দেড় বছর তখন দ্বিতীয় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আক্কাছ ও ময়না। বিয়ের আড়াই বছর পর সুমিকে নিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি। আক্কাছ আলীর সংসারে বোঝা হয়ে দাঁড়ান সুমি। এরপর স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন সুমিকে অনাথ আশ্রমে রেখে আসবেন। পরে রাজশাহীর বর্ণালী মোড় এলাকার শিশু সদনে সুমিকে রেখে আসেন ময়না বিবি। সেখানে সুমির পরিচয় হিসেবে লেখা হয় বাবার নাম আক্কাছ, মায়ের নাম ময়না। ময়নার বাবার বাড়ির ঠিকানা অনুযায়ী গ্রামের নাম উল্লেখ করা হয় রাজশাহীর বাগমারার কোয়ালীপাড়া গ্রাম।</p> <p>সুমি কয়েক দিন আগে তাঁর মা ও সত্বাবার খোঁজ পেয়ে মোবাইল ফোনে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তাঁরা।</p> <p>সুমির মা ময়না বিবি বলেন, ‘সুমির খালু আবু বাক্কার দুই দিন আগে বাজারে কার কাছ থেকে জানতে পারে, সুমি হারিয়ে যাওয়ার সেই গল্পটি কাগজে (পত্রিকায়) বের হয়েছে। এরপর সে আমাকে বিষয়টি বলে, বাগমারার সুমি নাকি তার মা-বাবাকে খুঁজছে। তারপর আমি নিশ্চিত হই, সেই সুমিই হলো আমার মেয়ে।’</p> <p>ময়না বিবি বলেন, ‘অভাবের কারণে তাকে অনাথ আশ্রমে রেখে আসি। আমার সেই মেয়ে আমার কাছে আসতে চাইছে। আমি তাকে ফিরে পেতে চাই।’</p> <p>এদিকে মা-বাবার সঙ্গে সরাসরি দেখা করার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুমি বলেন, ‘বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত তাঁদের সঙ্গে দেখা করব। প্রত্যেক সন্তানেরই স্বপ্ন, যেন তার মা-বাবা পাশে থাকেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি। এটি হয়তো বিধাতারই লিখন। তার পরও আমি মা ও সত্বাবাকে ফিরে পেয়েছি, তাতেই আমি খুশি।’</p>