<p>করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেওয়া সাধারণ ছুটির মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক ছাঁটাই চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি মজুরির দাবি জানানো হলে, কারখানা থেকে শ্রমিকদের বের করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন শ্রমিক নেতারা।</p> <p>এর মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এই সংকটের সময় শ্রমিক ছাঁটাই না করার জন্য কারখানাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।</p> <p>করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা হবে না বলে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বারবার গণমাধ্যমে আশ্বস্ত করেছেন।</p> <p>এদিকে বকেয়া মজুরির দাবিতে গতকাল সোমবার রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসেন। একই দিন ময়মনসিংহের ভালুকায় মজুরির দাবিতে বিক্ষোভের সময় মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গাড়িচাপায় দুই শ্রমিক নিহত হয়।</p> <p>সাধারণ ছুটির মধ্যে শুধু ব্যক্তিগত সুরক্ষরার সরঞ্জাম (পিপিই) তৈরির জন্য বিশেষ কয়েকটি কারখানা খোলা রাখার কথা বলা হলেও বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে, তাদের তালিকাভুক্ত তিন হাজার ২০০ কারখানার মধ্যে ১২টি কারখানা পিপিই তৈরি করছে। কিন্তু খোলা আছে প্রায় ১০০টি কারখানা। সংগঠটির দেওয়া তথ্য অনুসারে, গতকাল পর্যন্ত সক্রিয় দুই হাজার ২৭৪টি কারখানার মধ্যে দুই হাজার ১৮৬টি কারখানা বন্ধ আছে। এসব কারখানার মধ্যে ২৫টি শ্রমিকদের মার্চ মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে। আগামী ১০, ১৫ ও ২০ এপ্রিলের মধ্যে তিন দফায় মার্চের বাকি মজুরি পরিশোধ করা হবে।</p> <p>গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণ ছুটির সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। তিনি বলেন, গাজীপুরের কাশিমপুরের ডেনিশ নিটওয়্যার গতকাল এক হাজারের বেশি শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে। তাসমিনা নামে আরেকটি কারখানায় ১৫০, গাজীপুরের সিঅ্যান্ড নিটওয়্যার ৭০০ শ্রমিক ছাঁটাই করেছে।</p> <p>শ্রমিক ছাঁটাই না করার আহ্বান জানিয়ে গতকাল বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্যবসার ব্যয় কমানোর জন্য শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টি সর্বশেষ পন্থা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সংগঠনের সভাপতি কামরান টি রহমান শ্রমিক ছাঁটাই করতে হলেও দেশে বিদ্যমান শ্রম আইন অনুসরণ করার অনুরোধ জানান।</p> <p>শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, গতকালও কিছু কারখানায় মার্চ মাসের মজুরি নিয়ে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। এর মধ্যে কচুক্ষেত এলাকায় হামীম গ্রুপের হামীম অ্যাপারেলসে মজুরি নিয়ে সমস্যা তৈরি হলে শ্রমিকরা দুপুরে রাস্তায় নেমে ব্যারিকেড দেন। পরে সেনা সদস্যরা এসে প্রতিষ্ঠানের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আগামী ১২ এপ্রিল মজুরি দেওয়া হবে—এমন আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা ব্যারিকেড তুলে নেন।</p> <p>মার্চের মজুরি এবং কারখানা বন্ধের হালনাগাদ তথ্য জানতে চাইলে বিজিমইএ সভাপতি রুবানা হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মার্চের মজুরি পরিশোধের সময় না হলেও এরই মধ্যে বড় বড় প্রায় ২৫টি কারখানার মালিক তাদের মজুরি পরিশোধ করেছেন। ১০ এপ্রিল ১৬০টি কারখানা, ১৫ এপ্রিল এক হাজার ২০০টি এবং ২০ এপ্রিল ৮৮৯টি কারখানার মালিক তাঁদের শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করবেন।’</p> <p>নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাধারণ ছুটির নোটিশ দেওয়ার পর বর্তমানে দু-একটি কারখানা খোলা। প্রায় শতভাগ কারখানা বন্ধ রয়েছে। ৪০ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের মার্চের মজুরি পরিশোধ করেছে। আজ-কালের মধ্যে বাকি শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করা হবে।’</p> <p>ঊর্মি গার্মেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, ‘দেশের জরুরি প্রয়োজনে বিজিএমইএর উদ্যোগে প্রাথমিক স্তরের কিছু পিপিই আমরা তৈরি করলেও রপ্তানি করার জন্য কোনো পিপিই তৈরি করছি না। তবে স্থানীয় কিছু ক্রেতা পিপিই তৈরির কাজ দেওয়ার আহ্বান জানালেও আমরা এখনই প্রস্তুত নই বলে জানিয়েছি।’</p> <p>এদিকে ভালুকায় গতকাল ক্রাউন অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ এবং গাড়িচাপায় দুই শ্রমিক নিহতের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। সংগঠনের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, মালিকরা পরিস্থিতির সুযোগ নিতে গিয়ে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন এর রাশ টেনে ধরার বদলে সরকার উল্টো ভুক্তভোগী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ শুরু করেছে।</p> <p> </p>