<p>ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আরো কঠোর করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা যে অত্যাচার সহ্য করছি, তার বিরুদ্ধে আরো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমাদের আইনে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান আছে। কিন্তু ইউরোপিয়ানরা জরিমানা করছে বিলিয়ন ডলার। আমদেরও বিলিয়ন ডলার জরিমান করার বিধান করতে হবে।’ তা ছাড়া দেশের আইন না মানলে আগামী দিনে ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ‘তালা মারার’ ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।</p> <p>গতকাল সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের সাইবার থ্রেট ডিটেকশন ও রেসপন্স প্রকল্প আয়োজিত ডিজিটাল বাংলাদেশ ডিজিটাল সুরক্ষা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বত্তৃদ্ধতায় মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. নূর-উর-রহমান, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মহসিনুল আলম, বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান প্রমুখ।</p> <p>ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা এখন উপলব্ধি করছি, আইনটি একটু বেশি দুর্বল হয়ে গেছে। এটি আরো কঠোর করা দরকার, অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। বিশেষ করে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তায় আরো কঠোর ধারা অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।’</p> <p>ইন্টারনেট একদিকে যেমন সুফল বয়ে আনে, অন্যদিকে বিপর্যয়ও ডেকে আনে উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তাবিধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে ২২ হাজার পর্ন সাইট এবং দুই হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। গুজবসহ বিভিন্ন ডিজিটাল অপরাধ প্রতিহত করা হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের পুলিশ বাহিনী খুবই দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘কেবল দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হলেই চলবে না, তা সুরক্ষিত হতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করার সময় নানা সমালোচনা, প্রতিবাদ করা হয়। আজকে আমরা যখন ডিজিটাল নিরাপত্তার কথা বলছি, তখন বলা হচ্ছে আমরা বাক্স্বাধীনতা হরণ করছি। অথচ ফেসবুক, ইউটিউবকে বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে ইউরোপিয়ানরা। গণমাধ্যমকর্মীরা সবচেয়ে এই আইন নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। আইন প্রণয়ন হওয়ার পর একটিও মামলা এই আইনের আওতায় গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়নি। আমরা প্রমাণ করেছি এই আইন নিরাপত্তার জন্য; বাক্স্বাধীনতা হরণের জন্য নয়।</p> <p>ফেসবুক, গুগল বারবার বলা সত্ত্বেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আপনারা আর দুর্বল ভাবতে পারবেন না। আমাদের প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আপনাদের জন্য তালা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব, যাতে বাংলাদেশে যা খুশি তা আপনারা চালাতে না পারেন। আপনাদের বাংলাদেশে উপস্থিতি থাকতে হলে এখানে অফিস থাকতে হবে। নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরা এখানে বসে থেকে করতে হবে।’</p> <p>অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ইন্টারনেট নিরাপদ রাখতে সতর্ক থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা মেইল অ্যাকাউন্ট—দুই স্তরের ভেরিফিকেশন ব্যবহার করতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে পারলে কেউ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে না। ডিজিটাল দুনিয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। স্পাম কখনো খুলবে না।’</p> <p>সেমিনারে মূল প্রবন্ধে জিয়া রহমান বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধাকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করে আর্থিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে স্বার্থ অর্জন করে নিচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু গোষ্ঠী। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির অপব্যবহারে সব থেকে ঝুঁকির মধ্যে আছে ব্যাংক খাত। বিআইবিএমের তথ্য মতে, ৬২ শতাংশ ব্যাংক সাইবার ক্রাইমজনিত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।</p> <p>তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ দমনের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে—সাইবার প্রতিরক্ষা, সাইবার ইন্টেলিজেন্স এবং সাইবার অপরাধবিরোধী সামাজিক কার্যক্রম। এ জন্য সাইবার অপরাধবিরোধী সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন, কলাকৌশল নিরূপণ, সমাজের মানুষকে সাইবার অপরাধের মতো কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখার জন্য মৌলিক গবেষণা এবং রাষ্ট্রীয় পলিসিতে সেই ফলাফলের প্রতিফলন দেখাটাও জরুরি।</p> <p> </p>