<p>গত কয়েক দিনের জটিল আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের মধ্যে বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) বিষয়ে নতুন চুক্তি হয়েছে। ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে দুই পক্ষ নতুন করে সমঝোতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ ইয়ুংকার দুজনই চুক্তিটিকে ‘ন্যায্য ফল’ বলে অভিহিত করে এর অনুমোদনের জন্য নিজ নিজ পার্লামেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে নর্দান আয়ারল্যান্ডের ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) বিরোধিতা করায় পার্লামেন্টে এবারও চুক্তিটি আটকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।</p> <p>নতুন চুক্তির পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ ইয়ুংকার অভিন্ন সুরে বলেছেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সময়সীমা বর্ধিত করার আর কোনো প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টুইট করে বলেছেন, ‘আমরা চুক্তি পেয়ে গেছি। সুতরাং আমরা কেন সময় বাড়াব?’ তিনি বলেন, ‘ব্রেক্সিট সম্পন্ন করার জন্য এটা একটা মুহূর্ত। এরপর আমরা একত্রে আমাদের ভবিষ্যৎ অংশীদারি গড়তে কাজ করব। আমি মনে করি এটা ইউকে ও ইইউ উভয় পক্ষের জন্যই অবিশ্বাস্য ইতিবাচক হবে।’</p> <p>এ বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ ইয়ুংকার বলেছেন, ‘ইইউ ও ইউকের নাগরিকদের জন্য সর্বোত্তমভাবে যা করা যায়, এ চুক্তি তারই প্রতিফলন। এই চুক্তি উত্তর আয়ারল্যান্ড দ্বীপের শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং আমাদের সিঙ্গেল মার্কেটের সুরক্ষা দিয়েছে।’</p> <p>তবে এক বিবৃতিতে নর্দান আয়ারল্যান্ডের ব্রিটিশপন্থী দল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি বলেছে, এই প্রস্তাব আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নয়। উত্তর আয়ারল্যান্ডের অর্থনৈতিক সুবিধা এবং ইউনিয়নের অখণ্ডতাকে ক্ষতি করেছে।’</p> <p>এই ব্রেক্সিট ইস্যুকে কেন্দ্র করেই কয়েক মাস আগে পদত্যাগ করেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। মূলত পার্লামেন্টের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী সদস্যরা ‘সিঙ্গেল মার্কেট’ নীতি মেনে নিতে না পারার কারণেই তখন মে সরকারের চুক্তিটি অনুমোদন পায়নি। পরে কানজারভেটিভ পার্টির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বরিস জনসন। এরপর নির্ধারিত ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই ব্রেক্সিট কার্যকরের অঙ্গীকার করেন তিনি, যাতে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনার কথাও জানিয়ে রাখেন।</p> <p>যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে গত কয়েক দিনের টানা আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন ব্রেক্সিট চুক্তিতে সম্মতি দেন। দুই পক্ষের আলোচকরা গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ২টা পর্যন্ত এ নিয়ে দরকষাকাষি চালিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরই ইউরোপীয় কমিশন নতুন চুক্তির ঘোষণা দেয়।</p> <p>কী আছে চুক্তিতে : নতুন চুক্তির বেশির ভাগ অংশই হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের করা চুক্তির অনুরূপ। মূল পরিবর্তন ঘটেছে উত্তর আয়ারল্যান্ড ইস্যুতে। থেরেসা মের চুক্তিতে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে ইউরোপীয় মার্কেটের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। এটাই ছিল কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীদের মূল আপত্তি। তাঁরা এর সঙ্গে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নও জুড়ে দিয়েছিলেন। অথচ জটিলতাটি হচ্ছে স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার একটি চুক্তি রয়েছে। নতুন  চুক্তিতেও সিঙ্গেল মার্কেট বজায় রাখার কথা থাকলেও সীমান্তে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধের ক্ষমতা যুক্তরাজ্যের হাতে দেওয়া হয়েছে।</p> <p>চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্য ২০২০ সাল পর্যন্ত ইইউ বিধিমালা মেনে চলতে বাধ্য থাকবে। যুক্তরাজ্যকে বিচ্ছেদ বিল হিসেবে ৩৯ বিলিয়ন পাউন্ড ইইউকে পরিশোধ করতে হবে। ইইউর নাগরিকরা যুক্তরাজ্যে এবং যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ইইউতে বসবাসের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। এসব বিষয় থেরেসা মের চুক্তিতেও ছিল।</p> <p>নতুন কী পরিবর্তন : নতুন চুক্তিতে বলা হয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড ইইউ সিঙ্গেল মার্কেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। তবে ব্রিটেন কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বসাতে পারবে। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষের একটি যৌথ কমিটি ঠিক করবে কোন কোন পণ্যে শুল্ক আরোপ করা যাবে এবং যুক্তরাজ্য ইইউর পক্ষ থেকে ‘ইইউ ট্যারিফস’ সংগ্রহ করতে পারবে। উত্তর আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের কাস্টম টেরিটরির পরিবর্তে ইইউর অন্তর্ভুক্ত থাকলেও  ব্রেক্সিটের পর সরকার এ নিয়ে চুক্তি করতে পারবে। আর উত্তর আয়ারল্যান্ড ইইউর কাস্টম জোনের এন্ট্রি পয়েন্ট হিসেবে থাকবে। যুক্তরাজ্য উত্তর আয়ারল্যান্ডে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো ট্যারিফ আরোপ করতে পারবে না। এ ছাড়া এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইন পরিষদকে প্রতি চার বছর পর পর ভোটাভুটির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সূত্র : বিবিসি।</p>