<p>কনটেইনারবাহী একটি জাহাজ বহির্নোঙরে পৌঁছে মাত্র দুই দিন অপেক্ষার পরই চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারছে। অথচ গত জুলাই ও আগস্ট মাসে এ ধরনের একটি জাহাজকে জেটিতে ভিড়তে ১০ দিন পর্যন্ত বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর তা বন্দর ব্যবহারকারীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। কপালের চিন্তার ভাঁজও মুছে গেছে ব্যবসায়ীদের।</p> <p>বিভিন্ন বন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ বহির্নোঙরে বা সাগরে পৌঁছার পর তিন থেকে চার দিন অপেক্ষায় থেকে জেটিতে প্রবেশ করাটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। এখন সেই স্বাভাবিকেরও কম সময়ে জেটিতে প্রবেশ করার সুযোগ হওয়ায় স্বস্তিতে আমদানি-রপ্তানিকারকরা। এমনও হয়েছে যে এক দিন অপেক্ষার পরই জেটিতে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজগুলো।</p> <p>কিভাবে এটা সম্ভব হয়েছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১০টি কি-গ্যান্ট্রি ক্রেন একযোগে কাজ করা এবং পণ্য রাখার নতুন ইয়ার্ড যোগ হওয়ায় পণ্য ওঠানামা অনেক বেশি দ্রুত হচ্ছে। জোয়ার-ভাটাসহ বিদ্যমান বাস্তবতায় আমরা তিন দিন অপেক্ষায় থেকে জেটিতে ভেড়াটা স্বাভাবিক ধরে নিই। তাই একটি জাহাজ তিন দিন অপেক্ষার পর জেটিতে ভিড়তে পারছে। অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও কম সময় লাগছে। এই গতিটাকে ধরে রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’</p> <p>বন্দর ব্যবহারকারীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ব্যবহারকারীরা যত দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নেবেন জাহাজের অপেক্ষায় থাকার সময়ও ততই কমে আসবে। আর অপেক্ষমাণ সময় যত কমবে ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানিতেও পরিবহন খরচ ততই কমে আসবে।</p> <p>বহির্নোঙরে আসার পর একটি জাহাজ তিন থেকে চার দিন অপেক্ষায় থাকাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয় বন্দর ব্যবহারকারীরা। শিপিং এজেন্টরাও সেই সময় ধরেই জাহাজ ভাড়া করে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসেন। কিন্তু এর বেশি সময় বসে থাকতে হলেই প্রতিদিনের জন্য জাহাজের ওজনভেদে ৮ থেকে ১২ হাজার ডলার গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের।</p> <p>ঘূর্ণিঝড়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ধর্মঘট, ঈদের টানা লম্বা ছুটিসহ নানা কারণে গত জুলাই থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট বাড়ছিল। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বাড়তি সময় বসে থাকায় পণ্য আমদানিকারকদের বাড়তি মাসুলও গুনতে হচ্ছিল। তবে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় খুবই খুশি বন্দর ব্যবহারকারীরা।</p> <p>বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি এম এ সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দু-তিন মাস আগেই আমরা চরম উদ্বিগ্ন ছিলাম। বিদেশি ক্রেতারাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। কারণ আমরা নির্দিষ্ট সময় হিসাব কষেই পণ্যের অর্ডার নেই। আবার পণ্য উত্পাদন, জাহাজীকরণ এবং ক্রেতার কাছে নির্ধারিত সময়ে তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বন্দরের গতিশীলতা অনেক বড় ভূমিকা রাখে। সাত-আট দিনের জাহাজ জট দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারাটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। আমরা চাই বন্দর এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখুক।’</p> <p>চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, ‘কোটা আরিফ’ নামের কনটেইনারবাহী একটি জাহাজকে গত জুলাই মাসে বহির্নোঙরে পৌঁছে জেটিতে ভিড়তে অপেক্ষা করতে হয়েছে আট দিন। অথচ একই জাহাজ আগস্ট মাসে বহির্নোঙরে পৌঁছে জেটিতে ভিড়তে লেগেছে ১০ দিন। ওই জাহাজটিকেই গত সেপ্টেম্বরে জেটিতে ভিড়তে বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হয়েছে মাত্র চার দিন। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার জাহাজটি বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। আশা করা হচ্ছে, আজ শনিবার অথবা রবিবার সেটি জেটিতে ভিড়তে পারবে। আর তাহলে অপেক্ষমাণ সময় নেমে আসবে এক থেকে দুই দিনে।</p> <p>‘কোটা আরিফ’ জাহাজের দেশীয় শিপিং এজেন্ট পিআইএল বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ জহীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য ভালো সময় যাচ্ছে। কয়েক মাস আগেও আমরা ১০ দিনের জাহাজ জটে ছিলাম। জাহাজের অপেক্ষার সময় এতটা কমে আসায় চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তিও বিশ্বের শিপিং বাণিজ্যে উজ্জ্বল হয়েছে। আমরা এর ধারাবাহিকতা চাই।’</p> <p>জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে গত বৃহস্পতিবার ‘কেইপ ফরটিয়াস’ জাহাজটি ভিড়েছে মাত্র এক দিন অপেক্ষার পর। একইভাবে সিঙ্গাপুর থেকে আসা ‘লায়লা হোচিমিন’ বহির্নোঙরে পৌঁছে দুই দিন অপেক্ষার পর জেটিতে ভেড়ার সুযোগ পেয়ে গেছে।</p> <p>জানতে চাইলে বিদেশি শিপিং লাইন মেডিটেরানিয়ান শিপিং কম্পানির (এমএসসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘একটি কনটেইনার জাহাজ যখন আমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভাড়া করি তখন দিনে গড়ে কত ভাড়া গুনতে হবে তার হিসাব থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য আমরা তিন থেকে চার দিনকে স্ট্যান্ডার্ড বিবেচনা করেই জাহাজ আনি। এর বেশি হলে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার বাড়তি গুনতে হয়।’</p>