<p>শ্যালক থাপ্পড় মারায় শ্যালিকা ও তাঁর দুই মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন আব্বাস মিয়া। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তিন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেনের আদালতে তাঁর এই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। আগের দিন বৃহস্পতিবার সকালে হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের একটি টিম। গৃহবধূ নাজনীন বেগমের স্বামী সুমন মিয়া রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।</p> <p>মামলার বাদী উল্লেখ করেন, তাঁর স্ত্রীর বড় বোন ইয়াসমিনের সঙ্গে স্বামী আব্বাসের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। এ কলহের কারণে বিভিন্ন সময় তাঁর স্ত্রী বড় বোনের পক্ষে কথা বলায় আব্বাসের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে আব্বাস ও তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিনের ঝগড়া হলে বাদী সুমনের শ্যালক হাসান বড় বোনের স্বামী আব্বাসকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং পরদিন সকালে হাসান তাঁর বড় বোন ইয়াসমিন এবং তাঁর মেয়ে সুমাইয়াসহ সুমনের বাসায় বোন নাজনীনের কাছে চলে আসেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে সুমন কর্মস্থল সিদ্ধিরগঞ্জের জোনাকী পেট্রল পাম্প থেকে বাসায় এসে স্ত্রী ও সন্তানদের গলা কাটা রক্তাক্ত লাশ এবং তাঁর স্ত্রীর বড় বোনের প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকে (১৫) রক্তাক্ত (আহত) অবস্থায় খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। ঘটনাটি তাঁর শ্যালক হাসানকে ফোন করে জানালে কর্মস্থল থেকে শ্যালক হাসান ও স্ত্রীর বড় বোন বাসায় আসেন এবং হাসান সুমাইয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।</p> <p>মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক বলেন, ‘আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে শ্যালক চড়-থাপ্পড় মারার ক্ষোভ থেকেই আব্বাস এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সে একটি ধারালো ছোরা নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে যায়। প্রথমে সুমনের স্ত্রী নাজনীন এবং তাঁর দুই কন্যাসন্তান নুসরাত ও সায়মাকে গলা কেটে হত্যা করে। এ সময় চিৎকার-চেঁচামেচি করলে নিজের প্রতিবন্ধী মেয়েকেও ছোরা দিয়ে আঘাত করে সে।’</p> <p>সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক বলেন, ‘ঘাতক আব্বাস ক্ষোভ থেকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত নেই।’</p> <p>নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের এসআই কামাল হোসেন জানান, তিন খুন মামলার আসামি আব্বাস ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাঁকে জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।  </p> <p>নিহতদের দাফন : এদিকে দুই শিশুসন্তানসহ নাজনীন আক্তারকে চোখের জলে বিদায় দিয়েছে স্বজনরা। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের মরদেহ গতকাল দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে বাদ আসর জানাজা শেষে আদমজী কবরস্থানে পাশাপাশি তিনজনকে দাফন করা হয়। স্ত্রী ও আদরের দুই মেয়েকে হারিয়ে আবদুস সোবহান সুমন শোকে বাকরুদ্ধ।</p> <p>প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের সিআই খোলা এলাকায় আনোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন ছয়তলা ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনসে সংবাদ সম্মেলনে তিন খুনের ঘাতক আব্বাস মিয়াকে হাজির করা হয়। ওই সময় জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে জানান, হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।</p>