<p>প্রায় এক বছর পর সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে পদোন্নতির জট খুলছে। তবে খসড়া নীতিমালা দিয়ে পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়ায় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডিএমডি পদে পদোন্নতির জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ২০১৭ সালের একটি নীতিমালা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত এ নীতিমালা উপেক্ষা করে দু-তিন মাস আগে করা খসড়া নীতিমালা দিয়ে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করায় এটিকে উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন এ খাতের ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা।</p> <p>অন্যদিকে বর্তমানে সরকারি আটটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৭ জন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ডিএমডি পদে পদোন্নতির জন্য যোগ্য বলে জানা গেছে। খসড়া নীতিমালার আলোকে আগামীকাল রবিবার প্রথম ধাপে ১৩ জনের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের নেতৃত্বে একটি বোর্ড এ পরীক্ষা নেবে। এবারই প্রথম প্রার্থীদের পাওয়ার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য বলে প্রমাণ করতে হবে।</p> <p>কিন্তু ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা বলছেন, খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত না করে তার আলোকে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। এতে ডিএমডি পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্য, অভিজ্ঞ, জ্যেষ্ঠ ও দক্ষ ব্যক্তিরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ খসড়া নীতিমালায় নম্বর বিভাজনে এমন কিছু ক্রাইটেরিয়া অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা অল্প সময়ের মধ্যে কারো পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়।</p> <p>২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) থেকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে নীতিমালা জারি করা হয়। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটি প্রার্থীদের শিক্ষা ও পেশাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন, চাকরিগত সুনাম ইত্যাদি পর্যালোচনা করে পদোন্নতির জন্য কর্মকর্তাদের নাম সুপারিশ করবে। এ সুপারিশের আলোকে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে ডিএমডি পদে পদোন্নতি হয়ে আসছে।  কিন্তু বিদ্যমান এ নীতিমালা উপেক্ষা করে ডিএমডি পদে পদোন্নতির জন্য সম্প্রতি নতুন একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই নীতিমালা চূড়ান্ত না করেই গত ২৩ জুন সরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠিয়ে পদোন্নতিযোগ্য মহাব্যবস্থাপকদের নামের তালিকা পাঠাতে বলা হয়। চিঠিতে খসড়া নীতিমালাটি অন্তর্ভুক্ত করে সে আলোকে সাত দিনের মধ্যে তথ্য পাঠাতে বলা হয়।   </p> <p>জানা গেছে, নতুন খসড়া নীতিমালায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে মোট ১০০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) ৩০ নম্বর রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতায় ১০,  ব্যাংকে চাকরিকাল অভিজ্ঞতায় ৭, ব্যাংকিং ডিপ্লোমায় ৬, নেতৃত্বের পরিমাপে ৫, পেশাগত ডিগ্রিতে ২, চাকরিজীবনে বহুমুখী অভিজ্ঞতায় ২, পেশাগত দক্ষতায় ৭, প্রশিক্ষণে (অভ্যন্তরীণ/বৈদেশিক) ৭, পেশাগত প্রকাশনায় ২, অর্জিত প্রণোদনা ও পুরস্কারে ১, ইনোভেশনে ৪, কমিউনিকেশন দক্ষতায় ২ এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও উপস্থাপনায় রয়েছে ১০ নম্বর।</p> <p>ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা বলছেন, নম্বর বিভাজনের ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন, প্রশিক্ষণ, নেতৃত্বের পরিমাপন, প্রকাশনা, পেশাগত ডিগ্রি, প্রণোদনা ও পুরস্কার এবং মৌখিক পরীক্ষা ও উপস্থাপনায় যেসব নম্বর রাখা হয়েছে, তা অস্বচ্ছ, মনগড়া। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে সবার পক্ষে এসব ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করা সম্ভব নয়। এতে ডিএমডি পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বাণিজ্যের আশঙ্কা করেন তাঁরা।</p> <p>এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, যাঁরা অভিজ্ঞ, যোগ্য, দক্ষ এবং ভালো ব্যাংকার তাঁরা ব্যাংকে ব্যবসা বৃদ্ধি এবং গ্রাহকদের উত্তম সেবা দিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তাঁরা নিয়মিত কাজ রেখে সুযোগ সন্ধানে বিশেষ প্রকাশনা বা ট্রেনিং নেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন না। এ ক্ষেত্রে তাই নম্বর বিভাজন যৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে না। আবার কমিউনিকেশন, নেতৃত্ব এবং ইনোভেশনের নম্বর কিভাবে নির্ণয় হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাঁদের মতে, নীতিমালার কারণে ভবিষ্যতে এসব ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করার জন্য অনেকে ব্যাংকের মূল কাজ রেখে এসব অভিজ্ঞতা অর্জনে চেষ্টা-তদবির করবেন। এতে ব্যাংকের কাজে শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নীতিমালা পরিবর্তন হতেই পারে। একসময় প্যানেল অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু এখন অনেক জায়গায় পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এ রকম ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে। এতে হয়তো মনে করা হচ্ছে, যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করার জন্য এ পদ্ধতি বেশি কার্যকর হবে।’ নীতিমালা চূড়ান্ত না করে খসড়া নীতিমালার</p> <p>আওতায় পদোন্নতি দেওয়া কতটা যৌক্তিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ রকম হচ্ছে কি না, সেটা আমার জানা নেই। তবে যেকোনো ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য একটা সিস্টেম দাঁড় করানো হয়। ওই সিস্টেমটাই কিন্তু ফাইনাল। এ চিন্তা থেকে খসড়া নীতিমালার আওতায় পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।’        </p> <p>এদিকে ডিএমডি পদে পদোন্নতির তালিকায় থাকা ২৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে সোনালী ব্যাংকের চারজন, জনতা ব্যাংকের আটজন, অগ্রণী ব্যাংকের চারজন, রূপালী ব্যাংকের দুজন, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ছয়জন, কর্মসংস্থান ব্যাংকের একজন এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) একজন।</p>