<p>উত্তরার আজমপুরের বাসিন্দা আবু ইউসুফ। ওই এলাকার নবাব হাবিবউল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ালেখা করে তাঁর ছোট ছেলে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্কুলের সামনে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে এলাকার নেতারা চাঁদাবাজি করছেন। বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়া-আসায় সে যে কী কষ্ট! অথচ দেখার কেউ নেই।’</p> <p>নাম প্রকাশ না করে উত্তরার এক আওয়ামী লীগ নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজমপুরের এই পূর্বপাশটায় চাঁদাবাজির দখল নিয়ে মাঝে মাঝেই সংঘর্ষ হয়। যেকোনো সময় খুনোখুনির ঘটনা ঘটে যেতে পারে। দলের চাঁদাবাজ নেতারা এদের আশ্রয় দেন, চাঁদার ভাগ নেন।’</p> <p>উত্তরার আজমপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পূর্ব পাশ থেকে কাঁচাবাজার হয়ে রেলগেট পর্যন্ত ফুটপাতে বসানো হয়েছে এক হাজার ৫০০ অস্থায়ী দোকান। কাপড়, প্রসাধনী, জুতা-স্যান্ডেল, ফল, ফাস্টফুডসহ নানা ধরনের দোকান। দোকান ভেদে প্রতিদিন চাঁদা নেওয়া হয় ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কাপড়ের দোকানদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিদিন সন্ধ্যায় ৬০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। কাউন্সিলর ডি এম শামীমের লোকেরা এসে চাঁদার টাকা নিয়ে যায়। একেক সময় একেক লোক আসে। ওদের কাউন্সিলরের লোক বলেই জানি আমরা।’</p> <p>একজন জুতার দোকানি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দয়া করে আমার নামটা লিখবেন না ভাই। তাহলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রতিদিন আমি চাঁদা দিই ৪০০ টাকা। রাতের বেলায় এসে টাকা নিয়ে যায় ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন রুবেলের লোকেরা। তবে এখানে ভাগাভাগি আছে। কিছু দোকান থেকে কাউন্সিলরের লোকেরা চাঁদা নেয়, আর কিছু দোকান থেকে নেয় রুবেলের লোকেরা। আবার কখনো কখনো এই দুজনের লোকেরা এসে চাঁদার টাকা দাবি করে। এ নিয়ে মারামারিও বাঁধে।’</p> <p>ডি এম শামীম যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি এবং ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ওই ওয়ার্ডটি আগে ছিল আজমপুর ইউনিয়নে। পরে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়। আজমপুরে চাঁদাবাজিতে তাঁর প্রতিপক্ষ উত্তরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন রুবেল। ডি এম শামীমের শক্তির উৎস মহানগর যুবলীগ, আর দেলোয়ার হোসেন রুবেলের শক্তির উৎস উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফসারউদ্দিন খান। এলাকার ফুটপাতের দোকান এবং আজমপুরের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাঁদাবাজির একক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বর্তমানে এই দুই নেতা মুখোমুখি। দুজনই চান চাঁদাবাজির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। ফলে দুজনই পেশিশক্তির মহড়া দিচ্ছেন। দুজনের আস্তানাও পাশাপাশি। দেলোয়ার হোসেন রুবেল রেললাইনের পাশে ঘর তুলে নিজের কার্যালয় গড়েছেন। নিজের লোকজন নিয়ে সেখানেই বসেন তিনি। আর রুবেলের আস্তানা থেকে মাত্র ৩০০ গজ দূরে দেওয়ান সিটিতে ডি এম শামীমের আস্তানা। লোকজন নিয়ে তিনি বসেন সেখানে। এলাকাবাসী জানায়, প্রতি সপ্তাহে এই দুই নেতার লোকজনদের মধ্যে ধাওয়াধাওয়ির ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।</p> <p>আজমপুরের ওই এলাকায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একটি আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অন্যটি নবাব হাবিবউল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গা ঘেঁষেই বসানো হয়েছে অবৈধ দোকান। এ নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত অভিভাবকরা। আবু হোসেন নামের একজন অভিভাবক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফুটপাতের দোকানের কারণে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাতায়াতে সমস্যা হয়। ছুটির পর ঠেলা-ধাক্কায় অস্থির হয়ে ওঠে শিশুরা। আমরা বড় অসহায়।’</p> <p>ওই এলাকাতেই হাইওয়ে পুলিশের সদর দপ্তর। ওই দপ্তরের ফুটপাত ঘেঁষেও গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ দোকান।</p> <p>চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা ডি এম শামীম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি চাঁদাবাজি করি না। এলাকার কাউন্সিলর হিসেবে বরং চাঁদাবাজি বন্ধের চেষ্টা করি।’</p> <p>আপনার নামে তাহলে কারা চাঁদা নেয়—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা আমি জানি না।’</p> <p>চাঁদাবাজি নিয়ে আপনার লোকদের সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন রুবেলের লোকদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে—এমন প্রশ্ন তুললে তিনি আরো বলেন, ‘চাঁদাবাজি নিয়ে নয়, ওটা রাজনৈতিক কারণে।’</p> <p>সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন রুবেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি ফুটপাতের দোকানে চাঁদাবাজি করি না। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ </p> <p>কিন্তু আপনি তো পুরো এলাকার চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন—এমনটি বললে রুবেল আরো বলেন, ‘না, এই অভিযোগ ঠিক নয়।’ কিন্তু অসংখ্য অভিযোগ আছে আপনার লোকেরা প্রতিদিন ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদার টাকা তোলে। জবাবে তিনি বলেন, ‘এলাকার দোকানদাররা আমার সামনে এসে এমন কথা বলতে পারবে না।’</p>