<p>হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রুস্তমপুর টোলপ্লাজাসংলগ্ন বসুন্ধরা এলপি গ্যাস প্রজেক্টের নির্মাণকাজ সন্ত্রাসীরা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের দাবি মতো ১৫ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় এক মাস ধরে প্রজেক্টটি স্থবির হয়ে পড়ে আছে।</p> <p>এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার সকালে হবিগঞ্জ জেলা জজ আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। মামলাটি আমলে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে সিআইডি পুলিশকে তদন্তমূলক ব্যবস্থা নিতে আদেশ প্রদান করেছেন আদালত।</p> <p>মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৯ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হৃদয় এন্টারপ্রাইজ নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউপির রুস্তমপুর টোলপ্লাজাসংলগ্ন বসুন্ধরা এলপি গ্যাস প্রজেক্টের দুই কোটি টাকার নির্মাণকাজের অনুমতিপত্র পায়। কাজের অনুমতিপত্র পাওয়ার পর থেকে মামলার ১ নম্বর আসামি কুখ্যাত সন্ত্রাসী রুস্তমপুর গ্রামের মৃত এরশাদ উল্লার ছেলে ফজলু মিয়ার নেতৃত্বে আসামিরা দাবি করে কাজটি তাদের সমিতি শাহজালাল ট্রেড অ্যান্ড কমার্স লিমিটেডের বরাবরে দিয়ে দিতে হবে। না হলে তারা কাউকে কাজ করতে দেবে না বলে হুমকি দিতে থাকে।</p> <p>আসামিরা স্থানীয় হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নিরুপায় হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে এবং তাদের কথামতো তাদের নামীয় উপরোক্ত সমিতির দ্বারা কাজ করাতে কোনো আপত্তি নেই মর্মে অঙ্গীকারনামা প্রদান করেন। কিন্তু বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ আসামিদের সমিতির নামীয় কাগজপত্র যাচাই করে দেখে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই গত ৯ এপ্রিল পুনরায় মেসার্স হৃদয় এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ প্রদান করে। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, তাদের এলাকায় কাজ করতে হলে তাদের ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে।</p> <p>হৃদয় এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার এম এ আজাদ চাঁদা না দিয়ে কাজ শুরুর প্রস্তুতি নেন। গত ৬ এপ্রিল বসুন্ধরা এলপি গ্যাস কম্পানির প্রতিনিধি মাহবুব আলম সরেজমিনে প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন। বিকেল ৩টার সময় বসুন্ধরা এলপি গ্যাস প্রজেক্টে সন্ত্রাসী ফজলু মিয়ার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী চাঁদার দাবিতে ঠিকাদার এম এ আজাদকে আটকে রাখে। এরপর চাঁদা না পেয়ে বাদীর সঙ্গে থাকা মেসার্স হৃদয় এন্টারপ্রাইজের নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের চেক বই ছিনিয়ে নেয়। এরপর ঠিকাদারের গলায় রামদা ধরে হত্যার ভয় দেখিয়ে শাহজালাল ট্রেড অ্যান্ড কমার্সের নামে সন্ত্রাসী ফজলু মিয়া ১৫ লাখ টাকার একটি চেক লিখিয়ে নেয়। এ সময় ফজলুর সঙ্গী আসামি কমলা মিয়া, আ. মন্নান, লিটন, রিয়ান ঠিকাদার আজাদকে মারধর করে আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঠিকাদার আজাদকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।</p> <p>এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে নবীগঞ্জ কোর্টে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়।</p> <p>হৃদয় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম এ আজাদ বলেন, ‘আমি ১৫ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় এক মাস ধরে সন্ত্রাসীরা আমার কাজ বন্ধ করে রেখেছে। তারা আমাকে আটক করে জোরপূর্বক ১৫ লাখ টাকার একটি চেকও লিখিয়ে নিয়েছে।’</p> <p>এ ব্যাপারে চাঁদাবাজ ফজলু মিয়া বলে, ‘আমরা স্থানীয় লোক। কাজ আমাদের দিতে অইবো। আমি এমপির লোক, মামলা করলে কাজ হবে না।’</p> <p>চেকের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ফজলু মিয়া বলে, ‘আমরা টাকা পাই। তাই চেক দিতে বলেছি।’</p> <p>নবীগঞ্জ থানার ওসি ইকবাল হোসেন বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি জেনেছি ছোটখাটো ঝামেলা হয়েছে, থানায় অভিযোগ দিলে স্থানীয় এমপি স্যার বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন বলেছেন। তাই মামলাটি রেকর্ড করা হয়নি।’</p> <p>স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, একটা চেক আজাদ আরেকটি সমিতিকে দিয়েছেন। এ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।</p>