<p>চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যস্ত বাণিজ্যিকপাড়া আগ্রাবাদ এলাকা। জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর এলাকার কাছের সড়কে একপাশে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন এক নারী। শরীরটা কুঁজো হয়ে আছে। পাশেই এক নবজাতক। মা আর নবজাতকের কান্নার শব্দ শুনে আশপাশের মানুষ জটলা করে দাঁড়িয়েছে। সড়কের পাশেই সন্তান প্রসব করে মা তখন প্রায় নিথর। চোখে পানি।</p> <p>সাহস করে কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না সদ্য মা হওয়া নারীর দিকে। তখনো নবজাতক আর মায়ের নাড়ির অবিচ্ছেদ্য জোড় রয়ে গেছে। সেটিও কাটতে সাহস পাচ্ছিল না পথচারীদের কেউ। এমন সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাসুদুর রহমান। মা আর নবজাতককে নাড়ি জোড়া থাকা অবস্থাতেই তিনি উদ্ধার করে দ্রুত নিয়ে যান আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে। তাঁর এই দ্রুত পদক্ষেপের কারণে বেঁচে গেছে দুটি প্রাণ। জয় হয়েছে মানবতার।</p> <p>সড়কে সন্তান প্রসব এবং মা ও নবজাতককে উদ্ধারের এই ঘটনা ঘটে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে পৌনে ৮টার মধ্যে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা মা ও নবজাতককে চিকিৎসা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, হাসপাতালে মা ও কন্যাশিশুটি সুস্থ আছে।</p> <p>ঘটনার বিষয়ে উপপরিদর্শক মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সহকর্মী কনস্টেবল শাহীনের ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি যে সড়কের পাশে এক নারী সন্তান প্রসব করেছেন। খবরটা পেয়েই ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হই। সেখানে পৌঁছার পর দেখতে পাই যে অনেক লোক আশপাশে জড়ো হয়েছে। মায়ের কাছে গিয়ে দেখি, তখনো সন্তান আর মায়ের নাড়ি অবিচ্ছেদ্য অবস্থায় রয়ে গেছে। তাত্ক্ষণিক পুলিশের মোবাইল টিমকে ঘটনাস্থলে ডেকে নেই। আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অবহিত করেই প্রসূতি ও শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই।’</p> <p>পুলিশের এই কর্মকর্তা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিষয়টি ছিল উদ্বেগের। কারণ সড়কের পাশে পড়ে থাকা মা ও নবজাতকের নাড়ি তখনো অবিচ্ছেদ্য অবস্থায় ছিল। দুজনকে কাছাকাছি রেখে গাড়িতে তোলা এবং গাড়িতে রেখে হাসপাতালে নেওয়াও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। একটু এদিক-সেদিক হলেই নাড়ি ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তখন দুটি জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে যেত।’</p> <p>মাসুদুর রহমান জানান, হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তাররা চিকিৎসা শেষে জানান যে শিশুটি মায়ের গর্ভে থাকতেই মল খেয়ে ফেলেছিল। শিশুটির ওজনও তুলনামূলক কম। তাই বাঁচিয়ে রাখা ছিল কঠিন। তবে চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকরা অভয় দিয়েছেন। চিকিৎসাধীন দুজনই নিরাপদে আছে।</p> <p>জানা গেছে, প্রসূতি রোজিনা মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি আগ্রাবাদ জাদুঘর ও গ্রামীণফোন সেন্টারের আশপাশে থাকেন। ভবঘুরে এই নারীর বাড়ি সন্দ্বীপ উপজেলায়। গতকাল পর্যন্ত বিস্তারিত পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ।</p> <p>মানবিক এই উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে উপপরিদর্শক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘মানুষ হিসেবে আমি কর্তব্য পালন করেছি। শিশুরা অসহায়। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীও শিশুর মতোই। চিকিৎসার সময় ওষুধ কিনে দিয়ে আরো তৃপ্তি পেয়েছি। মা ও কন্যাশিশুর প্রাণ রক্ষায় মানবিক দায়িত্ব পালনের যে সুযোগ আমি পেয়েছি, সেটা সব সময় আসে না।’</p> <p>সহকর্মীর এমন মানবিক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন ডবলমুরিং থানার ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘পুলিশের নেতিবাচক খবর বেশি প্রকাশ পায়। আর মাসুদুর রহমান নেতিবাচক খবরের বিপরীতে চমৎকার একটি ইতিবাচক কাজ করে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর মতো মানবিক পুলিশিংই আমাদের কাম্য। আর তা আরো বেশি বেশি করতে পারলে জনগণ পুলিশকে সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে।’</p> <p> </p>