<p>মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল বা এর কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সিটিসেলের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের একক বেঞ্চ গতকাল সোমবার এই আদেশ দিয়েছেন।</p> <p>এর আগে চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও সিটিসেলের কাছে তাদের পাওনা আদায়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়। সিটিসেলের কাছে তাদের পাওনার পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার।</p> <p>আদালতের স্থগিতাদেশ সম্পর্কে বিটিআরসির সচিব মো. সরওয়ার আলম গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদালতের ওই আদেশ সম্পর্কে আমরা এখনো অবগত নই।’</p> <p>তবে গত রাতে সিটিসেলের পক্ষ থেকে এক ই-মেইল বার্তায় জানানো হয়, আদালতের এই নির্দেশনা সম্পর্কে তারা জেনেছে। আদালতের এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের স্পেকট্রাম বাতিলের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না।</p> <p>এদিকে আজ মঙ্গলবার মধ্যরাতে সিটিসেলের স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ ফিরিয়ে নেওয়া বা এর নেটওয়ার্ক বন্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এ ছাড়া বিটিআরসি ‘কেন লাইসেন্স বাতিল করা হবে না’-এর কারণ দর্শানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে এক মাসের সময় দিয়েছে সিটিসেলকে। ওই সময়ও আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে।</p> <p>এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সিটিসেল বন্ধের সিদ্ধান্তে অনড়। সিটিসেলের পক্ষ থেকে সময় চেয়ে আবেদন করা হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। সিটিসেলের সর্বশেষ আবেদনে ব্যাংকের কাছে তাদের দায়-দেনার বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সময় চাওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে সময় দিতে রাজি নয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।</p> <p>ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গত বৃৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘সিটিসেলকে ব্যাংকের বিষয়টি ব্যাংকের সঙ্গেই মেটাতে হবে। এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা সিটিসেল বন্ধের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছি। সিটিসেল বন্ধের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতে বিশৃঙ্খলা বন্ধের একটি নজির স্থাপন করতে চাই।’</p> <p>প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট সিটিসেলের গ্রাহকদের অপারেটর পরিবর্তনের জন্য আরো সাত দিন সময় বাড়ানো হয়। এদিনে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক বৈঠকের পর তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেন, সিটিসেল গ্রাহকদের জন্য আগের সময়সীমা আরো সাত দিন বাড়ানো হয়েছে। সিটিসেল বন্ধের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে সরকারের কাছে সংশ্লিষ্ট ‘ফাইল’ পাঠানো হবে বলেও তিনি জানান।</p> <p>এর আগে গত ৩১ জুলাই বিটিআরসি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সিটিসেলের গ্রাহকদের ১৬ আগস্টের মধ্যে বিকল্প সেবা বা ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়।</p> <p>বিজ্ঞপ্তিতে সিটিসেল গ্রাহকদের জানানো হয়, এই মোবাইল অপারেটরের কাছে সরকারের প্রায় ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা রাজস্ব বকেয়া রয়েছে। লাইসেন্স নবায়নের পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কমিশন থেকে সিটিসেলকে বকেয়া রাজস্ব জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং সিটিসেলের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর পরও সিটিসেল বিভিন্ন সময়ে বকেয়া অর্থ পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও তা বকেয়া পরিশোধ করেনি। সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব পরিশোধ না করে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া লাইসেন্সের শর্তাবলির পরিপন্থী এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১-এর বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ অবস্থায় বিটিআরসি সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করার এখতিয়ার রাখে। কাজেই বিটিআরসি যেকোনো সময় সিটিসেলের তরঙ্গ বরাদ্দ বাতিল এবং অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।</p> <p>এরপর গত ৩ আগস্ট বিটিআরসির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, সিটিসেলের কর্মকর্তারা কিছু প্রস্তাব রেখেছেন। সেসব প্রস্তাব বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকারই সিটিসেল বন্ধের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ওই দিন বিটিআরসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ১ আগস্ট সিটিসেল বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু গ্রাহকদের কথা ভেবে তাদের অপারেটর বদলের সুযোগ দেওয়ার জন্য ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।</p>