<p>সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে পার্কিং স্পেস উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) যেসব মার্কেটের পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান করা হয়েছে তা উদ্ধারে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনাও রয়েছে। বিষয়টি জরুরি বিবেচনা করে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে দুই মাস আগে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, কমিটি প্রতিবেদন দেওয়ার পর এসব দোকান উচ্ছেদ করা হবে। বাস্তবতা হলো, বেঁধে দেওয়া সাত দিন তো দূরের কথা, ৬০ দিনে সেই প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি। এ অবস্থায় পুরো বিষয়টি ঝুলে গেছে।</p> <p>সূত্র জানায়, ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ ও সম্পত্তি বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময়ে করপোরেশনের মার্কেটের কার পার্কিংয়ে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুলিস্তান এলাকার সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স ভবন-১ ও ২, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টারসহ আটটি মার্কেটের পার্কিং স্পেসে বরাদ্দ দেওয়া এসব দোকান উচ্ছেদ করা হবে।</p> <p>ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, উচ্ছেদ কার্যক্রম ঠেকাতে কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অপতত্পরতা শুরু করেছে। এমনকি সিটি করপোরেশনের নাম ভাঙিয়ে মার্কেটগুলোয় ইতিমধ্যে মাইকিং করা হয়েছে। একই সঙ্গে উচ্ছেদ ঠেকানোর নাম করে দোকানগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলে তহবিল গঠন করা হচ্ছে।</p> <p>একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করতে সংশ্লিষ্ট মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে ‘বিশেষ তহবিল’ গঠন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় দেড় হাজার দোকান থেকে উচ্ছেদ ঠেকানোর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় চলছে।</p> <p>ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন অবশ্য তাঁর অবস্থানে অনড়। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘পার্কিং স্পেসে দোকান থাকলে তা উচ্ছেদ হবেই। এ নিয়ে কোনো আপস করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে আমরা বিষয়টি বোঝার জন্য একটি দাপ্তরিক কমিটি গঠন করেছি। তারা প্রতিবেদন দিলেই পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’ কমিটি নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কমিটির আহ্বায়ক শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিলম্ব হচ্ছে। তবে এখন পেয়ে যাব।’</p> <p>জানা যায়, ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপসচিব) খালিদ আহমেদকে আহ্বায়ক ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপসচিব) মোস্তাফা কামাল ও আইন কর্মকর্তা (উপসচিব) শফিউল আরিফকে সদস্য করে তিন মাস আগে এই কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে দুই মাস পেরিয়ে গেছে। প্রতিবেদন জমা পড়েনি। এ বিষয়ে কমিটির কোনো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে সময়ক্ষেপণের অভিযোগও পাওয়া গেছে। তবে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় সময়মতো প্রতিবেদন দিতে পারিনি। দু-এক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেব। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা মেনেই উচ্ছেদের পক্ষে মতামত দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করব।’</p> <p>এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) খান মোহাম্মদ বিলাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে উচ্ছেদের ব্যাপারে মাইকিং করার কথা নয়। কেউ যদি করে থাকে তা ব্যক্তি-উদ্যোগে করেছে। আর কোনো তহবিল গঠন করেও উচ্ছেদ ঠেকানো যাবে না। মেয়র মহোদয়ের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, বেইসমেন্ট উদ্ধার করা হবে। পাশাপাশি সব ধরনের অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান থাকবে; করপোরেশনের নাম ভাঙালেও কাউকে কোনো অর্থ দেবেন না।’</p> <p>রাজউকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আমরা নির্দেশ পেয়েছি। পার্কিং স্পেসের দোকান বৈধ কী অবৈধ তা দেখা হবে না। সিটি করপোরেশনকে আমরা চিঠি দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করে দিলে ভালো; অন্যথায় আমরাই খুব অল্প সময়ের মধ্যে উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেব।’</p>