<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়েশা বিনতে আলী (রহ.) ছিলেন মিসরের বিখ্যাত নারী মুহাদ্দিস ও লেখক। তাঁর পুরো নাম আয়েশা বিনতে আলী বিন মুহাম্মদ বিন আলী বিন আবদুল্লাহ। তাঁর মায়ের নাম সাওদা। তিনি কায়রো নগরীতে জন্মগ্রহণ করায় তাঁকে কাহেরিয়্যা এবং হাম্বলি মাজহাবের অনুসারী হওয়ায় হাম্বলিয়্যা বলা হতো। উম্মে আবদুল্লাহ ও উম্মে ফদল তাঁর উপনাম। সম্মানপূর্বক তাঁকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিত্তুল ইশ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সম্বোধন করা হতো। ৭৬১ হিজরিতে তিনি মিসরের কায়রো নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পারিবারিক পরিমণ্ডলেই আয়েশা বিনতে আলী (রা.)-এর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তবে মিসরে বিখ্যাত মনীষীদের কাছ থেকেও তিনি দ্বিনি ইলম অর্জন করেন। যেমন তিনি নানা আবুল হারাম (রহ.)-এর কাছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফাওয়াইদুল গাইলানিয়্যা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বইয়ের প্রথম পাঁচ অধ্যায়ের পাঠ গ্রহণ করেন, আবু ওমর ইজ্জ ইবনু জামাআ (রহ.)-এর কাছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফাওয়াইদু ইবনি বুশরান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ও </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুসনাদে শাফেয়ি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পড়েন, আল হারাভি (রহ.)-এর কাছে আল্লামা দিময়াতি (রহ.)-এর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফাদলুল খায়ল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পড়েন। এ ছাড়া মিসর ও শামের একাধিক মুহাদ্দিসের কাছ তিনি হাদিসের সনদ লাভ করেন। যাঁদের মধ্যে আছেন মাওকাফুদ্দিন আবদুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ, ইবনু কাদিউল জাবাল ও আল খাল্লাতি (রহ.)। তিনি তাঁদের কাছে ইলমুল কিরাত ও হাদিস পাঠ করেন। আর হাতের লেখা শেখেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়েশা বিনতে আলী (রহ.) নিজেকে হাদিসের সেবায় উৎসর্গ করেন। সারা জীবন তিনি হাদিসের প্রচার ও প্রসারে কাজ করেন। অসংখ্য ব্যক্তি তাঁর থেকে হাদিসের পাঠ গ্রহণ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কয়েকজন শিক্ষার্থী হলেন শামসুদ্দিন মুহাম্মদ বিন আবদুল লতিফ মহল্লি, আয়েশা বিনতে আতিয়্যা, কাসিম বিন কুতলুবুগা, আবুল ফদল তাকিউদ্দিন আবদুর রহমান প্রমুখ। তবে জাইনুদ্দিন আবু নাঈম রিদওয়ান বিন মুহাম্মদ শাফেয়ি মুস্তামলি (রহ.) তাঁর ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। নানা আবুল হারাম (রহ.) থেকে তিনিই ছিলেন শেষ হাদিস বর্ণনাকারী। ইমাম সাখাভি (রহ.) বলেন, তিনি একটি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জুঝ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (এক প্রকার হাদিসগ্রন্থ) সংকলন করেন, যা তাঁর থেকে জাইনুদ্দিন রিদওয়ার (রহ.) বর্ণনা করেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাফেজ ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুজাম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থে তাঁর আলোচনা করেছেন এবং তাঁর বর্ণিত হাদিস উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর প্রশংসা করে বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদের তুলনায় তাঁর ছাত্রসংখ্যা বেশি ছিল। তিনি ছিলেন উত্তম মানুষ। সুন্দর হাতের লেখার অধিকারী।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> আয়েশা বিনতে আলী (রহ.) সম্পর্কে ইমাম সাখাভি (রহ.) লেখেন, তিনি ছিলেন নেককার, আল্লাহভীরু ও মর্যাদাবান নারী। তিনি সুন্দর হস্তলিপির অধিকারী ছিলেন। আমি তাঁর হাতের লেখা দেখেছি। তিনি প্রখর ধীশক্তির অধিকারী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাত বিষয়ে তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য ছিল। সিরাতের বিষয়গুলো তাঁর স্মৃতিপটে দৃশ্যমান ছিল। প্রতিটি যুদ্ধাভিযানের নির্ভুল বর্ণনা দিতেন। গাইলানিয়্যাতসহ বহু হাদিসের কিতাব তাঁর মুখস্থ ছিল। বহু কবিতা তাঁর মুখস্থ ছিল, বিশেষত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাহা জুহাইরের</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কাব্য সমগ্র। যেকোনো জিনিস খুব দ্রুত মুখস্থ করতে পারতেন। তাঁর পরিবার ধর্মীয় জ্ঞান ও হাদিস চর্চায় খ্যাতিমান ছিল। এত কিছুর পরও তিনি ছিলেন অধিক ইবাদতকারী ও কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। তাঁর মতো নারী মানুষ কমই চোখে দেখেছে। আয়েশা বিনতে আলী (রহ.) হজ করেন। তিনি পিতার সঙ্গে একাধিকবার বায়তুল মোকাদ্দাস ও ফিলিস্তিনের আল খলিল, যেখানে ইবরাহিম (আ.)-এর কবর আছে তা ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি হাদিসের পাঠদানও করেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। তিনি কাজি বোরহানুদ্দিন (রহ.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি দীর্ঘদিন একাকী জীবন যাপন করেন। বুধবার ১৬ জিলকদ ৮৪০ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তাঁর কবরকে শীতল করুন। আমিন।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্যসূত্র : আদ-দাউল লামি : ১২/৭৮</span></span></span></span></p>