<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দ্বীপ দেশ শ্রীলঙ্কা। বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটির আয়তন ৬৫ হাজার ৬১০ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা দুই কোটি ২০ লাখ। জনসংখ্যার ৭৪.৯ শতাংশ সিংহলি, ১১.২ শতাংশ শ্রীলঙ্কান তামিল, ৯.২ শতাংশ মুর, ৪.২ শতাংশ ভারতীয় তামিল এবং বাকিরা নানা সম্প্রদায়ের মানুষ। ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে ৭০.২ শতাংশ বৌদ্ধ, ১২.৬ শতাংশ হিন্দু, ৯.৭ শতাংশ মুসলিম, ৭.৪ শতাংশ খ্রিস্টান। পরিসংখ্যান মতে দেখা যায়, বৌদ্ধ অধ্যুষিত দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কার তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম। ২০১২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশটির ৯.৭ শতাংশ তথা প্রায় ১৯ লাখ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা সাধারণত দ্বীপের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে বাস করে। তবে অন্যান্য এলাকায়ও মুসলমানদের বাস রয়েছে। ১৬ শতকের মধ্যে আরব ব্যবসায়ীরা ভারত মহাসাগরের পথ ধরে দেশটিতে আগমন করলে এখানে ইসলামের আগমন ঘটে। তারা ছিল প্রধানত মসলার ব্যবসায়ী। তবে মূলত সপ্তম শতাব্দীতে শ্রীলঙ্কায় ইসলামের বিকাশ শুরু হয়। এ সময় আরব বণিকরা শ্রীলঙ্কাসহ ভারত মহাসাগরের বেশির ভাগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত। ১৯ শতকে ডাচ ও ব্রিটিশ শাসনের সময় শ্রীলঙ্কায় মালয়েশিয়ান মুসলমানরা আগমন করে এবং তখন দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে ব্যাবসায়িক কাজে পাকিস্তান ও দক্ষিণ ভারতের মুসলমানরা শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করলে দেশটিতে সুন্নি মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সম্ভবত শ্রীলঙ্কা একমাত্র অমুসলিম দেশ, যেখানে টেলিভিশন ও রেডিওতে একসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান সম্প্রচার করা হতো। দেশটির মুসলমানরা </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মুর</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নামে পরিচিত। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শ্রীলঙ্কান মুসলমানরা ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে দেশটিতে বাস করছে। বর্তমানে দেশটির বিভিন্ন স্থানে এক হাজার ৫০০ মসজিদ, ১০০ কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র এবং ২০০টির মতো মাদরাসা ও ইসলাম শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা খুবই ধর্মপরায়ণ। প্রতিবছর প্রায় তিন হাজার মুসলমান সৌদি আরবে হজ পালনের জন্য গমন করে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শ্রীলঙ্কার রাজনীতি ও অর্থনীতিতে মুসলমানদের অবদান কম নয়। অনেক বড় বড় ব্যবসায় মুসলমানরা বেশ এগিয়ে রয়েছে। রাজনীতিতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের রাজনৈতিক দল </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শ্রীলঙ্কান মুসলিম কংগ্রেস</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> বেশ প্রভাবশালী। অন্যান্য রাজনৈতিক দলেও মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ আছে। তবে রাজনৈতিকভাবে মুসলমানরা ভালো অবস্থায় নেই। তারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। মুসলমানদের জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে দেশটিতে বেড়েছে মুসলমানদের স্থাপনা ও অবকাঠামো। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও মুসলিমরা এগিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে মুসলমানদের দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে দেখানো হয়েছে। ফলে বৌদ্ধ অধ্যুষিত শ্রীলঙ্কায় মুসলমানদের উত্থান নিয়ে নানা শঙ্কার তৈরি হয়েছে। এতে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ বাড়ছে। দেশের সরকারও নানা অজুহাতে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করছে। করোনার সময় মসজিদগুলোতে মুসলমানদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছিল। জুমার নামাজেও মুসল্লিদের একত্র হওয়া সীমিত করা হয়েছিল। অথচ সেই সময় বাস ও ট্রেনের মতো গণপরিবহন চলছিল। অফিস-আদালত ও মার্কেট নির্বিঘ্নে চালু ছিল। তামিল-সিংহলি সংঘাতের সময় সংখ্যালঘু মুসলমানদের সঙ্গে সিংহলিদের সম্পর্ক ভালোই ছিল। তবে ২০০৯ সালে তামিলরা পরাজিত হলে পরিস্থিতি বদলে যায়। তখন বিভিন্ন ডানপন্থী সিংহলিজ সংগঠন মুসলিমদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাতে থাকে। দেশটির মানবাধিকার আইনজীবী বাভানি ফনসেক বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গৃহযুদ্ধ শেষে মুসলিমরা হয়ে গেছে নতুন শত্রু। আমরা এরই মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বেশ কিছু হামলার ঘটনা ঘটতে দেখেছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শ্রীলঙ্কা সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মহান সামারানায়েক বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কোনো সম্প্রদায়কে ভিন্নভাবে দেখার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা পদ্ধতিগত নীতি দেশটির নেই। তবে আমি স্বীকার করছি, কিছু সমস্যা হয়তো সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই আছে, এমনকি সিংহলিদের মধ্যেও।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এভাবে অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>