<p>পবিত্র কোরআনে মোট সুরা ১১৪টি।‌ দুখান ৪৪ নম্বর সুরা‌। পবিত্র মক্কায় নাজিল হওয়া এই সুরায় ৫৯টি আয়াত আছে। ছোট-বড় প্রত্যেক আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে আছে চিন্তার খোরাক। আয়াতের অন্তর্নিহিত চিত্র ও শিক্ষা হৃদয়ে ভাবনার ঝড় তোলে‌। কোরআন নাজিলের বক্তব্য দিয়ে সুরাটি শুরু করা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর প্রতি কাফিরদের অকথ্য জুলুম-নির্যাতনে বদদোয়ার প্রতিক্রিয়া ও মহানবী (সা.)-এর ক্ষমার অপূর্ব দৃষ্টান্তের বর্ণনা এসেছে এই সুরায়। গুরুত্বপূর্ণ এই সুরার আমল ও ফজিলত উল্লেখ করা হলো :<br /> দাজ্জালের মুখে সুরা দুখান<br /> মদিনায় বসবাসকারী এক ইহুদির নাম ছিল ইবনে সাইয়াদ। তার মধ্য দাজ্জালের সব সাদৃশ্য বিদ্যমান ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সত্যতা যাচাই করতে গিয়েছিলেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে সে নবী (সা.)-এর মনের কথা বলে দিয়েছিল। অকপটে সুরা দুখানের নাম জানিয়ে দিয়েছিল। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ওমর (রা.) নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে একটি দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ইবনে সাইয়াদের বাড়ির দিকে গেলেন। তাঁরা তাকে (ইবনে সাইয়াদকে) বনু মাগালা দুর্গের পাশে অন্যান্য বালকদের সঙ্গে খেলাধুলারত পেলেন। তখন ইবনে সাইয়াদ বালেগ হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছিল। সে মহানবী (সা.)-এর আগমন অনুভব করার আগেই তিনি তার হাত ধরে ফেলেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে আমি আল্লাহর রাসুল? ইবনে সাইয়াদ তাঁর দিকে দৃষ্টি করে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি উম্মিদের রাসুল । এরপর সে নবীজি (সা.)-কে বলল, আপনি কি সাক্ষ্য দেবেন যে আমি আল্লাহর রাসুল? তখন রাসুল (সা.) তাকে ছেড়ে দিয়ে বলেন, আমি আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর রাসুলদের প্রতি ঈমান এনেছি। তারপর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন? তুমি কি দেখে থাকো? ইবনে সাইয়েদ বলল, আমার কাছে সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী আগমন করে থাকে। নবীজি (সা.) বলেন, ব্যাপারটি তোমার কাছে বিভ্রান্তিকর করা হয়েছে। এরপর নবী (সা.) তাকে বলেন, আমি একটি বিষয়ে তোমার থেকে (আমার মনের মধ্যে) গোপন রেখেছি। (বলো তো সেটা কী) ইবনে সাইয়াদ বলল, তা হচ্ছে আদ-দুখখু (সুরা দুখান)। তখন তিনি ইরশাদ করেন, তুমি লাঞ্ছিত হও। তুমি কখনো (তোমার জন্য নির্ধারিত) সীমা অতিক্রম করতে পারবে না। তখন ওমর (রা.) বলেন, আমাকে অনুমতি দিন হে আল্লাহর রাসুল! আমি তার গর্দান উড়িয়ে দিই। নবীজি (সা.) বলেন, সে-ই যদি দাজ্জাল হয়ে থাকে তাহলে তাকে কাবু করার ক্ষমতা তোমাকে দেওয়া হবে না। আর যদি সে দাজ্জাল না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করার মধ্যে তোমার কোনো কল্যাণ নেই। (বুখারি, হাদিস : ৬১৭৩)<br /> নবীজি (সা.) একাধিকবার তার দাজ্জাল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার মায়ের কারণে সম্ভব হয়নি।<br /> সুরা দুখানের ফজিলত<br /> আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, রাতে যে ব্যক্তি সুরা দুখান পড়ে ঘুমাবে, সে এমনভাবে সকাল করবে, ৭০ হাজার ফেরেশতা তার ক্ষমার জন্য দোয়া করতে থাকবে।<br /> (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৮৮)<br /> সুরা দুখানের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) আরো বলেন, জুমার রাতে যে ব্যক্তি সুরা দুখান পড়বে, তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৮৯)<br /> উল্লেখ্য যে ইমাম তিরমিজি এই দুটি হাদিস উল্লেখ করার পর লিখেছেন- হাদিস দুটি গারিব ও জইফ।<br /> সুতরাং দৈনিক আমলের তালিকায় এই সুরা রাখা উচিত। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।</p>
