মসজিদে কুবায় নামাজ পড়লে ওমরাহর সওয়াব পাওয়া যায়। প্রিয় নবীজি (সা.) প্রতি শনিবার সেখানে যেতেন। ২৪ জুন ২০২২ গভীর রাতে মক্কা থেকে মদিনায় এসেই আমরা কয়েকজন পরিকল্পনা করি, সকালে মসজিদে কুবায় যাব ইনশাআল্লাহ। পরিকল্পনা অনুযায়ী সকালের নাশতা সেরে আমরা বের হই মসজিদে কুবার উদ্দেশে।
বিজ্ঞাপন
আমরা মিম্বারের একদম কাছে গিয়েই নামাজ আদায় করি। মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও দোয়া করার পর মসজিদের ভেতরটা ঘুরে দেখি। তারপর হোটেলে ফেরার উদ্দেশে আবারও ট্যাক্সি নিই। ট্যাক্সিচালক একজন বেলুচিস্তানি। তিনি অত্যন্ত নম্রভাবে আমাদের সঙ্গে পরিচিত হন, তারপর মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে ধারণা দিতে দিতে এগিয়ে চলেন। পথে আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর বাগান, নবীজি (সা.)-এর সহধর্মিণী উম্মে সালামা (রা.)-এর গ্রামসহ নবীজি (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত যে কটি ঐতিহাসিক জায়গা পড়েছে, সেগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দেন। তাঁর গাড়িতে না উঠলে হয়তো আমরা এই জায়গাগুলো চিহ্নিতই করতে পারতাম না। অবশেষে তিনি আমার নসিহতস্বরূপ বলেন, এখানে সবাই এসে ধন-সম্পদ, টাকা পয়সার জন্য দোয়া করে। সন্তান-সন্ততির বড় চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদির জন্য দোয়া করে, আপনারা দয়া করে এভাবে দোয়া করবেন না। এগুলো শান্তি এনে দিতে পারে না। সন্তানকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে না। বরং সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও নিজের জন্য এই দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন সবাইকে ‘সিজদায়ে মুতমাইন্নাহ’ (প্রশান্তির সিজদা, যখন সিজদায় যাবে দুনিয়ার কোনো চিন্তা, ভয়, অলসতা তাকে আচ্ছন্ন করবে না) করার তাওফিক দেন। দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও সফলতা দান করেন। যার কাছে এগুলো থাকবে, তার জীবন বরকতময় হবে। তার সম্পদ যদি কমও হয়, তাতে বরকত থাকবে, শান্তি থাকবে। আর যদি কারো জীবনে বরকত না থাকে, আল্লাহর সন্তুষ্টি না থাকে, তার কাছে যত সম্পদই থাক তার শান্তি থাকবে না। সন্তানরা তার কষ্টের কারণ হবে। এই সম্পদ দিয়ে কী লাভ বলুন!
তাঁর এই কথাগুলো অন্তরে রেখাপাত করছিল। মনে হচ্ছিল—সত্যিই, দোয়া কবুলের জায়গায় এসে আমাদের এমন দোয়া করা উচিত, যা আমাদের উভয় জাহানের কল্যাণ দেবে।