আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির চূড়ান্ত স্তর মানুষের মেধা, জ্ঞান ও উপলব্ধি শক্তির ঊর্ধ্বে। সুতরাং মুমিন আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির চূড়ান্ত ‘হাকিকত’ (প্রকৃতি) জানার ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা ত্যাগ করবে। নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ বান্দাকে এই সত্যের মুখোমুখি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না।
বিজ্ঞাপন
তাহলে বান্দা আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির কতটা জানতে পারবে? এর উত্তর হলো—বান্দার প্রচেষ্টা, সাধ্য ও আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারেই মুমিন আল্লাহ সম্পর্কে জানতে পারবে। আল্লাহ বলেন, ‘যা তিনি ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৫)
যেহেতু আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির চূড়ান্ত সীমা বান্দার সাধ্যাতীত, তাই মুমিন সেখানেই থেমে যাবে যেখানে কোরআন ও সুন্নাহ তাকে থেমে যেতে বলেছে। সে আল্লাহর নাম ও গুণাবলির এমন কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে না, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল দেননি। তার প্রচেষ্টায় থাকবে বিনয় ও অক্ষমতার প্রকাশ। ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া বলেন, আমরা মালিক বিন আনাস (রহ.)-এর কাছে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবু আবদুল্লাহ! কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ আরশে সমাসীন’। আল্লাহ কিভাবে আরশে সমাসীন হলেন? তিনি বলেন, মালিক (রহ.) মাথা ওঠালেন; এমনকি তিনি ঘামছিলেন। অতঃপর বললেন, সমাসীন হওয়ার বিষয়টি অজ্ঞাত নয়, তবে তার ধরন মানবীয় যুক্তি ও বুদ্ধির ঊর্ধ্বে। তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। তাঁর ব্যাপারে প্রশ্ন করা বিদআত। আমি তোমাকে একজন বিদআতকারীই মনে করছি। অতঃপর তিনি তাকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। (আল-আসমা ওয়াস-সিফাত, পৃষ্ঠা ৮৬৭)
ইমাম মুহাম্মদ বিন হাসান আশ-শায়বানি (রহ.) বলেন, “আল্লাহর পক্ষ থেকে যা এসেছে আমরা তার ওপর ঈমান স্থাপন করি, তবে আল্লাহ তা দ্বারা ‘কিরূপ’ ইচ্ছা করেছেন তা নিয়ে ব্যস্ত হই না এবং তা নিয়েও ব্যস্ত হই না, যা আল্লাহর রাসুল (সা.) ইচ্ছা করেছেন। ” (বাহরুল কালাম, পৃষ্ঠা ১২৮)
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহ তাঁর থেকে যেসব বিষয় গোপন করেছেন তা আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেওয়া। যেমন হাদিসে এসেছে ‘জান্নাতিরা তাদের প্রতিপালককে দেখবে’। সুতরাং মুমিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথাকে সত্যায়ন করবে এবং তার কোনো উপমা অনুসন্ধান করবে না। আর এই বিষয়ে পৃথিবীর সব আলেম একমত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৪; মানাকিবু ইমাম আহমদ, পৃষ্ঠা ২০৯)
আল-মাউসুয়াতুল আকাদিয়া