<p>বর্তমানে শিক্ষার প্রসার যত বেশি হচ্ছে, মানুষের দৃষ্টিও তত খুলে যাচ্ছে এবং সবাই শান্তির পরিবর্তে হতাশা ও বিস্ময় এবং আনন্দের পরিবর্তে দুঃখ ও নিরানন্দ প্রত্যক্ষ করছে। আর এ কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতে তাহলে কাঁদতে বেশি, হাসতে কম।’</p> <p>একটু চিন্তা করুন, যদি কোনো এক দুর্বল বৃদ্ধের সুস্থ ও সুঠাম দেহের যুবক সন্তান থাকে, নাতি-পুতি ইত্যাদি থাকে, তাহলে লোকে তাকে দেখে কেমন ঈর্ষা করবে? বলবে, কী সৌভাগ্য তার। আল্লাহ তাকে নির্ভরযোগ্য আশ্রয় দিয়েছেন। সে ব্যক্তি নিজেও আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। কেননা সে যে বাগান করেছে, তা আজ ফুলে-ফলে সুশোভিত।</p> <p>কিন্তু ওই ব্যক্তি তখনই প্রচণ্ড আঘাত পাবে, যখন দেখবে তার অন্তিমকালে তাকে এক ফোঁটা পানি এগিয়ে দেওয়ার মতো কাউকে কাছে দেখবে না। আমাদের অবস্থা বৃদ্ধের এই সন্তানদের মতো। ইসলাম আজ আমাদের দিকে তাকিয়ে আফসোস করে বলছে, এত লোকের (আলেমের) মধ্যে যদি সামান্য কয়েকজন কাজের হতো, তাহলে সেই অল্পসংখ্যকই না কত ভালো ছিল। ইসলাম বলছে, সবাই আমার নামে মানুষকে আহ্বান করছে, কিন্তু তাদের কাজ একনিষ্ঠভাবে। ইসলামের জন্য সামান্যই হচ্ছে। আল্লাহর শুকরিয়া যে মানুষের ভবিষ্যতের বিষয় অজানা এবং তাদের দোষ সম্পূর্ণ গোপন। মানুষ যদি অন্তর্দৃষ্টি পেত, তাহলে দেখতে পেত যে পৃথিবীটা দুর্বলতা, অসম্পূর্ণতা, কলুষতা আর পাপ-পঙ্কিলতায় ভরে গেছে। সবাই জাঁকজমক ও ঝলমলে পোশাক পরে হিংস্র পশুর মতো বিচরণ করছে।</p> <p>আলেমদের অন্তর্দৃষ্টি খোলা ও ইসলামের জন্য নিবেদিত হওয়ার পথে বুজুর্গদের সোহবত তথা সংস্রবের কোনো বিকল্প নেই। যদি এর কোনো বিকল্প থাকত, তাহলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবি বলা হতো না। তাঁদের আউলিয়া, সুফি বা অন্য কোনো পদবিতে ভূষিত করা হতো। তাবেয়িদের অনেকে জিকির, তাসবিহ ও নফল ইবাদতে খুব অগ্রগামী হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা মর্যাদায় সাহাবিদের সমতায় পৌঁছতে পারেননি। সোহবতের দ্বারা কয়েক মুহূর্তের যে কাজ হয়, তা প্রখর মেধা, একনিষ্ঠ অধ্যয়নেও হয় না।</p> <p>সোহবতে হৃদয়ে আকুলতা-ব্যাকুলতা সৃষ্টি হয়, অন্তর নুরে উদ্ভাসিত হয়। সব কিছুতে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। এর দ্বারা কোনো জিনিসের গুরুত্ব, মর্যাদা ও মূল্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়—যা কিতাবপত্রেও পাওয়া যায় না, বিদ্যার্জনের মাধ্যমেও আয়ত্ত করা সম্ভব হয় না। এটা যেন একটা প্রদীপ। প্রদীপ থেকে প্রদীপে যেমন আলো সঞ্চারিত হয়, তেমনি হৃদয় থেকে হৃদয়ে আলোর গতি সঞ্চালন হয়। বুজুর্গ ব্যক্তিদের কাছে উপস্থিত হওয়ার সবচেয়ে বড় উপকার হচ্ছে মানুষ নিজেদের তুচ্ছ মনে করতে শেখে এবং অনুশোচনার সুযোগ পায়, বুজুর্গদের দরবারে গিয়ে নিজেদের অবস্থা দেখে লজ্জিত হয়। তাদের চরিত্র মাধুর্য, ইবাদত, রুহানিয়্যাত দেখে নিজেদের দোষত্রুটি ও ঘাটতি সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। নেক মানুষের সাহচর্যে থাকার বিষয়টা তো সরাসরি ওহির দ্বারা প্রমাণিত।</p> <p>ভাষান্তর : মুহাম্মদ সাদিক হুসাইন</p>