রাজধানী ঢাকার যেসব অঞ্চলে প্রাচীনকালেই জনবসতি গড়ে উঠেছে মোহাম্মদপুর তার অন্যতম। মোগল শাসনামলেও মোহাম্মদপুর গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ সময়ের নানা স্থাপনা খুঁজে পাওয়া যায় এ অঞ্চলে। ধারণা করা হয়, মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সাত মসজিদ ও বিবির মসজিদের মতো প্রাচীন স্থাপনাগুলো সম্রাট শাহজাহানের আমলে নির্মিত।
বিজ্ঞাপন
সুবিশাল পুকুর ও ঈদগাহ চত্বর মিলিয়ে মসজিদের চারপাশে অন্তত তিন একর জায়গা। চুন-সুরকি দ্বারা নির্মিত মসজিদটির মূল আকর্ষণ মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অনন্য নির্মাণশৈলী। মাটির অনেক গভীরে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে। সরু ইটের দেয়ালগুলোর ওপরের অংশ পাঁচ হাত পুরু। বৃহদাকার গম্বুজাকৃতির ছাদ, যা ২৭ বর্গফুট প্রকোষ্ঠের ওপর অষ্টকোণ চৌকির ভিত্তির ওপর স্থাপিত। পার্সিয়ান ক্যালিগ্রাফি সজ্জিত মেহরাব এবং ছাদের চারপাশে শোভাবর্ধনকারী ছয়টি মিনার। তবে কালের বিবর্তনে তার কিছু কিছু আজ ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে মূল প্রাচীন স্থাপনাটিকে ঠিক রেখে মসজিদের ব্যাপক সংস্কার, পরিবর্ধন ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
ব্রিটিশ উপনিবেশ কায়েম হলে মসজিদটি বন্ধ হয়ে যায় এবং তাদের অত্যাচারে লালমাটিয়া জনশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে মসজিদটিও বিরান হয়ে পড়ে এবং বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত মসজিদটি অনাবাদ থাকে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে লালমাটিয়ায় আবার মানুষের আবাস গড়ে উঠলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা মসজিদটিকে নামাজ আদায়ের উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেয়। আর এ কাজে এগিয়ে আসেন মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর একনিষ্ঠ ছাত্র মাওলানা আব্দুর রউফ (রহ.) জঙ্গলাকীর্ণ মসজিদটি পরিষ্কার করে পুনরায় ইবাদতের উপযুক্ত করেন। তিনি ১৯৬০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জন্ম নেন। কিছুদিন পর মাওলানা আব্দুর রউফ (রহ.) মসজিদকে কেন্দ্র করে মক্তব-হিফজ বিভাগ চালুর মাধ্যমে একটি মাদরাসা গড়ে তোলেন, যা আজ গোটা দেশে জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া নামে সুপ্রসিদ্ধ।
ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে শিক্ষা-কারিকুলামে পরিচালিত এ মাদরাসায় কওমি সিলেবাসের সর্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিস খোলা হয় ২০০০ সালে। মাদরাসার শিক্ষাসচিব মুফতি শরিফুল ইসলাম সুহাইল বলেন, এ পর্যন্ত এখান থেকে দুই হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী মাওলানা (মাস্টার্স সমমান) হয়েছেন। তা ছাড়া কয়েক বছর আগে এখানে ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ ইফতা-ও চালু করা হয়েছে। বর্তমানে লালমাটিয়া মাদরাসায় অন্তত সাড়ে সাত শ শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের শিক্ষাদান ও সেবার জন্য নিয়োজিত আছেন ৩৬ জন শিক্ষক ও ১৩ জন সাধারণ স্টাফ। বিবির মসজিদের খতিব ও লালমাটিয়া মাদরাসার সহকারী অধ্যক্ষ মাওলানা মাসরুরুল হক জানান, মরহুম বড় হুজুর মাওলানা আব্দুর রউফ (রহ.) মসজিদের পাশে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে সোনালি ধারার সূচনা করেছেন, তা আজও অব্যাহত রয়েছে এবং তার সঙ্গে ইলমের আরো একাধিক শাখার বিস্তার ঘটেছে। মাদরাসায় নিয়মতান্ত্রিক পঠন-পাঠনের পাশাপাশি আমাদের শাহী মসজিদেও সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনাকে শানিত করতে সাপ্তাহিক তাফসির, দৈনিক কোরআন শিক্ষার আসর এবং সময়োপযোগী আরো নানা আয়োজন করা হয়। আমরা চেষ্টা করছি লালমাটিয়া মসজিদ-মাদরাসা কমপ্লেক্সকে গণমুখী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত করতে।