<p>রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর প্রথম ওহি আসার পর কিছু দিন ওহি আগমনের ধারা বন্ধ ছিল। তবে ঠিক কত দিন ওহি নাজিল বন্ধ ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। সর্বনিম্ন তিন দিন থেকে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত ওহি বন্ধ থাকার মতামত রয়েছে। তিন বছর বন্ধ থাকার মতটি প্রসিদ্ধ হলেও আল্লামা শফিউর রহমান মোবারকপুরীসহ একাধিক সিরাত গবেষক তা অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। তাঁরা দুই বা আড়াই বছরের মতটিও প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ ক্ষেত্রে ইমাম মুহাম্মদ আবু জাহরা (রহ.)-এর মতটি তুলনামূলক বেশি গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেছেন, পাঁচ মাস ও কয়েক দিন ওহি নাজিল বন্ধ ছিল। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৮৬; খাতামুন-নাবিয়্যিন, পৃষ্ঠা ২৭৭)</p> <p>আল্লামা ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) ওহি বন্ধ রাখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ‘ওহি কিছুকাল স্থগিত থাকার কারণ ছিল এই যে তিনি যে ভয় পেয়েছিলেন সেই ভয় যেন কেটে যায় এবং পুনরায় ওহি প্রাপ্তির আগ্রহ হয়, তার মনে প্রতীক্ষা জাগ্রত হয়।’ (ফাতহুল বারি : ১/২৭)</p> <p>তবে সময়কালটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হতাশার। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘...আর কিছু দিনের জন্য ওহিও বন্ধ থাকে। এমনকি নবী (সা.) এ অবস্থার কারণে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি আমরা এ সম্পর্কে তার থেকে জানতে পেরেছি যে তিনি পর্বতের চূড়া থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার জন্য একাধিকবার দ্রুত সেখানে চলে গেছেন। যখনই নিজেকে ফেলে দেওয়ার জন্য পর্বতের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিবরাইল (আ.) তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে বলতেন, হে মুহাম্মদ, নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল। এতে তাঁর অস্থিরতা দূর হতো এবং নিজ মনে শান্তিবোধ করতেন। তাই সেখান থেকে ফিরে আসতেন। ওহি বন্ধ অবস্থা যখন তাঁর ওপর দীর্ঘ হতো তখনই তিনি ঐরূপ উদ্দেশে দ্রুত চলে যেতেন। যখনই তিনি পর্বতের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিবরাইল (আ.) তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে আগের মতো বলতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯৮২)</p> <p>বিস্ময় ও বেদনার সময় কেটে যাওয়ার পর তাঁর সামনে বাস্তব অবস্থা প্রকাশ পেল এবং তিনি নবুয়তের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হলেন। তখন আবারও ওহি নাজিল শুরু হলো। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) ওহি স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, একদা আমি হাঁটছি, হঠাৎ আসমান থেকে একটা শব্দ শুনতে পেয়ে আমার দৃষ্টি ওপরে তুললাম। দেখলাম, সেই ফেরেশতা, যিনি হেরা গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন, আসমান ও জমিনের মধ্যে একটি আসনে উপবিষ্ট। এতে আমি শংকিত হলাম। অবিলম্বে আমি ফিরে এসে বললাম, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো’, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো’। অতঃপর আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, “হে বস্ত্রাবৃত রাসুল! উঠুন, সতর্ক করুন, আর আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন, স্বীয় পরিধেয় বস্ত্র পবিত্র রাখুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।’ (সুরা মদ্দাসসির, আয়াত : ১-৫; সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪)</p> <p>গ্রন্থনা : মুশফিকা আফরা।</p> <p> </p>