মহান আল্লাহ মুসা (আ.)-এর উদ্দেশে বলেন, ৪১. ‘এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করে (মনোনীত করে) নিয়েছি।
৪২. তুমি ও তোমার ভাই [হারুন (আ.)] আমার নিদর্শন নিয়ে যাত্রা করো এবং আমার স্মরণে কোনো ধরনের অলসতা কোরো না।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৪১-৪২)
তাফসির : আগের কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছিল, মহান আল্লাহ মুসা (আ.)-এর ওপর বিভিন্নভাবে দয়া করেছেন। তাঁর জন্মের পর থেকে নানা প্রতিকূলতায় তাঁকে বড় হতে হয়েছে। সর্বত্র মহান আল্লাহ তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন। আলোচ্য দুই আয়াতে নবী হিসেবে মুসা ও হারুন (আ.)-এর মনোনয়নের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে দ্বিন প্রচারের কাজে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং তাঁদের এই মর্মে সতর্ক করা হয়েছে যে যেকোনো স্থানে, যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হওয়া যাবে না।
মুসা (আ.) ইবরাহিম (আ.)-এর অষ্টম অধস্তন পুরুষ। মুসা (আ.)-এর পিতার নাম ‘ইমরান’ ও মায়ের নাম ‘ইউহানিব’। তবে মায়ের নামের ব্যাপারে মতভেদ আছে।
মুসা ও ঈসা (আ.) উভয়ে ছিলেন বনি ইসরাঈল বংশীয় নবী। তাঁরা বনি ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন।
মুসা (আ.) মিসরে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি লালিত-পালিত হন মিসরের সম্রাট ফেরাউনের ঘরে। তাঁর সহোদর ভাই হারুন (আ.) ছিলেন তাঁর চেয়ে তিন বছরের বড় এবং তিনি মুসা (আ.)-এর তিন বছর আগেই মৃত্যুবরণ করেন। উভয়ের মৃত্যু হয় মিসর ও শাম-এর মধ্যবর্তী ‘তিহ’ প্রান্তরে বনি ইসরাঈলের ৪০ বছর আটক থাকাকালীন সময়ে। ফেরাউনের জাদুকরদের সঙ্গে মোকাবেলার ঘটনার পর ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, মুসা (আ.) ২০ বছর মিসরে অবস্থান করেন।
আদম, ইয়াহইয়া ও ঈসা (আ.) ছাড়া প্রায় সব নবী ৪০ বছর বয়সে নবী হয়েছেন। মুসা (আ.)ও ৪০ বছর বয়সে নবী হয়েছেন। তাঁর জীবনের প্রথম ৩০ বছর মিসরে, তারপর ১০ বছর মাদিয়ানে, তারপর মিসরে ফেরার পথে তুর পাহাড়ের কাছে ‘তুবা’ উপত্যকায় অতিবাহিত হয়েছে। ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। অতঃপর ২০ বছর মিসরে অবস্থান করে সেখানকার অধিবাসীদের তাওহিদের দাওয়াত দেন। তারপর ৬০ বছর বয়সে বনি ইসরাঈলদের নিয়ে মিসর থেকে প্রস্থান করেন। এবং ফেরাউনের সলিল সমাধি হয়। অতঃপর আদি বাসস্থান কেনানের অধিবাসী আমালেকা গোত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশ অমান্য করায় অবাধ্য ইসরাঈলিদের নিয়ে ৪০ বছর ‘তিহ’ নামক প্রান্তরে উন্মুক্ত কারাগারে অবস্থান করেন। বায়তুল মুকাদ্দাসের সন্নিকটে ৮০ থেকে ১০০ বছর বয়সের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। বায়তুল মুকাদ্দাসের উপকণ্ঠে তাঁর কবর আছে।
গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ।
মন্তব্য