আরবি ‘জাহলুন’ শব্দ থেকে জাহেলি শব্দের উৎপত্তি। অর্থ মূর্খতাসুলভ আর জাহেলি যুগের অর্থ অন্ধকার সময়। ঐতিহাসিক যুগবিন্যাস অনুসারী ইসলামপূর্ব দেড় শ থেকে দুই শ বছর জাহেলি যুগ। ঐতিহাসিকরা জাহেলি যুগকে আরব ও ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে উল্লেখ করেন।
বিজ্ঞাপন
জাহেলি যুগে আরবসমাজ : জাহেলি যুগে আরবসমাজে নৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় নৈরাজ্য বিস্তার লাভ করে। মদ, জুয়া, ব্যভিচার, অশ্লীলতা, গোত্রীয় সংঘাত, অজ্ঞতা ও ক্ষমতার অনধিকার চর্চা চরম আকার ধারণ করেছিল। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত থেকে জাহেলি যুগের ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ছিলে অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন। ’ (সুরা: আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)
মহানবী (সা.)-এর অসংখ্য হাদিসে আরবদের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনযাত্রার চিত্র উঠে এসেছে। যেমন—রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উমাইমা বিনতে রুকাইকা (রা.) বাইআত গ্রহণ করতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তোমাকে বাইআত করাচ্ছি, তুমি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, সন্তান হত্যা করবে না, মিথ্যা রটনা করবে না, মৃত ব্যক্তির জন্য অতিরিক্ত কান্না করবে না এবং জাহেলি যুগের কোনো আচার-আচরণ অনুসরণ করবে না। ’ (মুসনাদে আহমদ : ১১/৭৫)
অন্ধকার ছড়িয়েছিল পৃথিবীময় : সাইয়েদ আবুল হাসান আলী (রহ.) মহানবী (সা.)-এর আগমনপূর্ব পৃথিবীর চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই যে, খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী ছিল মানব ইতিহাসে সর্বাধিক অন্ধকারময় ও অধঃপতিত যুগ। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানবতা যেভাবে অধঃপতিত ও অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছিল এ সময় সে তার চূড়ান্ত সীমায় গিয়ে উপনীত হয়েছিল। গোটা বিশ্বে এমন কোনো শক্তি ছিল না, যা এই পতনোন্মুখ মানবতাকে হাত ধরে তাকে ধ্বংসের অতল গহ্বর থেকে রক্ষা করতে পারে। অধঃপতনের গতি প্রতিদিনই দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছিল। ’ (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?, পৃষ্ঠা ৪১)
গ্রন্থনা : আতাউর রহমান খসরু