আল্লাহ ঈমানদারকে বড় ভালোবাসেন। মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। আত্মীয়তায় অভিন্ন। সম্পর্ক হৃদ্যতায় ও সখ্যতায় খুব কাছের। ভালোবাসায় এক দেহ, এক প্রাণ। চলনে-বলনে মধুমাখা। মুসলমানের পারস্পরিক সম্পর্ক খোদার আরশে নির্মিত। এ মনোহর বাঁধনের নির্মাতা মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)। এ বাঁধন বংশ-জাত-ধনী-গরিব-সাদা-কালো মানে না। ব্যবধান তৈরি করে না বৈষম্যের।
জগতের সব মুসলমান ভালোবাসা সম্পর্কে আত্মীয়তায় অভিন্ন। সাগর মহাসাগর পাহাড় অরণ্য সীমান্ত ভেদ করে হৃদয়ের বন্ধনের কথা বলে দূর বহু দূরে। জাগ্রত করে তোলে ঘুমন্ত মন পাখি। বাতাসের গায়ে ভর করে ভেসে বেড়ায় সেই চিরায়ত শাশ্বত বাঁধনের কথা। মুসলমান ভাই ভাই—এ স্লোগান শাশ্বত চিরন্তন। দিনের আলোর মতো পরিষ্কার-স্বচ্ছ। এই বাঁধনের আহ্বান পূর্বে-পশ্চিমে যেমন, তেমনি উত্তর-দক্ষিণে। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১০)
মুসলমান কেউ কারো ক্ষতি সাধন করতে পারে না। কারো দোষ নিন্দা জানাতে পারে না। মুসলমান মাত্রই আরেক মুসলমানের সেবা করবে, সহযোগিতার হাত বাড়াবে, অপরের ব্যথায় কাঁদবে—এটাই এই বন্ধনের দাবি। কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানের ক্ষতি সাধন করা হারাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলমান কারো খিয়ানত করবে না। কেউ কারো সঙ্গে মিথ্যা বলবে না। এবং কেউ কারো সহযোগিতা থেকে দূরে থাকবে না। প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত ধন-সম্পদ ও মান-মর্যাদা অন্য মুসলমানের জন্য হারাম...।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯২৭)
সব মুসলমান এক জীবন্ত বৃক্ষ। এক সত্তা, এক দেহ। দেখা-না দেখা, জানা-অজানা, চেনা-অচেনা সব মুসলমান এক বৃত্ত। একটা সুন্দর পরিশীলিত নির্মিত ফ্রেম। একটা সতেজ-সবুজ বৃক্ষ। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে একজন মুসলমান নির্যাতিত, ব্যথিত কিংবা কষ্ট পেলে আরেক মুসলমান সে ব্যথা অনুভব করবে—এটার নাম মুসলমানিত্ব। এটা ঈমানদারের বাঁধন। নুমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা দয়া অনুগ্রহ ও মায়া মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে সব মুমিন মুসলমান একটি দেহের সমতুল্য। যদি দেহের কোনো অংশ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও তা অনুভব করে। সেটা জাগ্রত অবস্থায় হোক কিংবা জ্বরের অবস্থায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৬)
মুসলমানের পারস্পরিক ভালোবাসার এক নিশ্ছিদ্র সুতা বাঙ্ময় হয় মানবতার নবী (সা.)-এর আরেক হাদিসে। আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন মুমিন অন্য মুমিনের জন্য নির্মিত ঘরের মতো। যার একাংশ অন্য অংশকে শক্তি জোগায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮১, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৫)
মুসলমানরা পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াবে—এটা শান্তির ধর্ম ইসলামের অমোঘ শিক্ষা। অন্য মুসলমানের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার ভেতর আছে প্রভূত কল্যাণ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তার থেকে কিয়ামতের দিন দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। আর যে কোনো মুসলমানের গোপন দোষ ঢেকে রাখবে, মহান আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার গোপন দোষ ঢেকে রাখবেন। মহান আল্লাহ ততক্ষণ তার বান্দার সহযোগিতায় থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩০, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৫)
এভাবেই ব্যক্তি থেকে পরিবার ও সমাজ থেকে রাষ্ট্র পেরিয়ে গড়ে উঠে মুসলিম বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব—ভাই ভাই আসমানি বন্ধন।
মন্তব্য