<p>অনেকের অভিযোগ, আয়-রোজগার ভালো হওয়া সত্ত্বেও অভাব দূর হয় না। অথচ তারা জানে না যে সম্পদ অধিকারীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণেও সম্পদের বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। নিম্নে জীবিকা থেকে বরকত দূরীভূত হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো—</p> <p><strong>পাপাচার :</strong> গুনাহের কারণে যেমন মানুষের আজাব-গজব নাজিল হয়, তেমনি জীবিকার বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর বরকত (কল্যাণ ও প্রাচুর্য) উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল, সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের শাস্তি দিয়েছি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬)</p> <p><strong>প্রতারণা ও ধোঁকা :</strong> মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করলে এবং তাদের ধোঁকা দিলে সম্পদের বরকত চলে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের এখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা বা বাতিল করা)। যদি তারা সত্য বলে এবং (পণ্যের) অবস্থা ব্যক্ত করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে এবং (পণ্যের) দোষ গোপন করে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৭৯)</p> <p>পণ্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করে তা বিক্রি করা ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়ার শামিল। যার কারণে সম্পদের বরকত উঠে যায়।</p> <p><strong>অধিক কসম খাওয়া :</strong> মানুষ নিজের কথাকে অন্যের কাছে বিশ্বস্ত করে তোলার জন্য কসম খেয়ে থাকে। প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে অধিক কসম খাওয়া উচিত নয়। মিথ্যা কসম খাওয়া বড় ধরনের পাপ, যার কারণে সম্পদের বরকত চলে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে অধিক কসম করা থেকে সাবধান থেকো। কেননা নিশ্চয়ই তাতে (মিথ্যা কসমে) বিক্রি বেশি হয় কিন্তু পরে (বরকত) ধ্বংস করে।’ (মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ২৭৯৩</p> <p><strong>সুদের আদান-প্রদান করা :</strong> সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মানুষ সুদ গ্রহণ করে। অথচ সুদের আদান-প্রদানে জীবিকার বরকত দূর হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিঃশেষ করেন ও সদকায় প্রবৃদ্ধি দান করেন...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৬)</p> <p><strong>নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা :</strong> মহান আল্লাহ তাঁর অশেষ নিয়ামত দ্বারা আমাদের চতুর্দিক ঘিরে রেখেছেন। রিজিক তাঁর অন্যতম নিয়ামত। এসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে বরকত ও কল্যাণ লাভ করা যায় না। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তা হলে আমি অবশ্যই তোমাদের বেশি বেশি করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (মনে রেখো) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)</p> <p><strong>কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা :</strong> কৃপণতা মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করে, যা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে। তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৮)</p> <p><strong>প্রাপ্ত রিজিক ও তাকদিরের ওপর সন্তুষ্ট না থাকা :</strong> আল্লাহ বান্দাদের জন্য রিজিক বণ্টন করে থাকেন। মানুষ আল্লাহপ্রদত্ত রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট থাকলে তার জীবিকায় বরকত লাভ হয়।</p> <p>পক্ষান্তরে ওই রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট না হলে জীবিকার বরকত চলে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ বান্দাকে প্রদত্ত জিনিসের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তাতে যদি সে সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন এবং তাকে বৃদ্ধি করে দেন। আর যদি সন্তুষ্ট না থাকে তাহলে তাতে বরকত দেন না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২০২৭৯)</p> <p><strong>অপচয় ও অপব্যয় :</strong> বাজে কাজে বা অপ্রয়োজনে খরচ করা হচ্ছে অপব্যয়। এটা মানুষের এক নিন্দনীয় স্বভাব, যার কারণে তার মধ্যে চৌর্যবৃত্তি, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ, উেকাচ গ্রহণ ইত্যাদি দুশ্চরিত্রতা বিস্তার লাভ করে। এ জন্য ইসলাম এগুলো নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা খাও ও পান করো। কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)</p> <p><strong>জাকাত না দেওয়া :</strong> জাকাত আদায় করা ফরজ। অনেকে এটা জানা সত্ত্বেও তা আদায় করে না। ফলে ইহকালীন ও পরকালীন আজাব-গজব আপতিত হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূপৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯)</p> <p>সম্পদের হক হচ্ছে জাকাত প্রদান করা। এ হক প্রদান করলে সম্পদে বরকত হয়, অন্যথায় বরকত দূরীভূত হয়ে যায়।</p> <p><strong>অন্যায় পথে সম্পদ আহরণ করা :</strong> হারাম উপায়ে সম্পদ অর্জন করলে তার বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে তাকে বরকত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অসংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে সে এমন ব্যক্তির মতো যে আহার করে, কিন্তু তৃপ্ত হয় না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৫২)</p> <p>জীবিকায় বরকত বৃদ্ধি এবং অব্যাহত থাকার জন্য উপরোক্ত কাজগুলো পরিহার করা জরুরি। মহান আল্লাহ আমাদের বরকতপূর্ণ রিজিক দান করুন। আমিন।</p>