<p>আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তি একই গর্তে দুইবার দংশিত হয় না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৩)</p> <p>আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) মুমিনদের সতর্ক ও সচেতন জীবন যাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ সতর্কতা মুমিনের পার্থিব ও অপার্থিব উভয় জীবনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মুমিন যেমন পাপের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে নিজেকে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, তেমনি বৈষয়িক ব্যাপারেও সে মানুষের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকবে। একইভাবে মুমিন অন্যদের প্রতারিত করবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘(ইসলামে) ক্ষতি করা ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৪১)</p> <p> </p> <p><strong>হাদিসের প্রেক্ষাপট</strong></p> <p>বদর যুদ্ধের সময় মক্কার কবি আবু ইজ্জাহ কোরাইশি বন্দি হয়। তখন তিনি অঙ্গীকার করেন আর কখনো মুসলমানের সঙ্গে যুদ্ধ করবে না এবং কোনো যুদ্ধে কবিতা আবৃত্তি করবে না। কিন্তু অঙ্গীকার ভঙ্গ করে সে উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বলেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তি একই গর্তে দুইবার দংশিত হয় না।’ (মুখতাসার সিরাতে রাসুল, পৃষ্ঠা ১৭৫)</p> <p> </p> <p><strong>বারবার দংশিত না হওয়ার ব্যাখ্যা</strong></p> <p>হাদিসবিশারদরা আলোচ্য হাদিসের দুই ধরনের ব্যাখ্যা করেছেন। তবে উভয় ব্যাখ্যা একত্রেও গ্রহণ করা সম্ভব।</p> <p><strong>এক. পাপ কাজের ব্যাপারে সতর্কতা :</strong> রাসুলুল্লাহ (সা.) আলোচ্য হাদিসে পাপ পরিহার ও পাপের ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মুমিন সতর্ক থাকবে যেন তার দ্বারা কোনো পাপ কাজ সংঘটিত না হয়। আর কোনো পাপ সংঘটিত হলে তার পুনরাবৃত্তি পরিহার করবে এবং তা থেকে তাওবা করে ফিরে আসবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের তাওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তাওবা করে। এরাই তারা আল্লাহ যাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তাওবা তাদের জন্য নয় যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে আমি এখন তাওবা করছি এবং তাওবা তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য প্রস্তুত করেছি মর্মন্তুদ শাস্তি।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৭-১৮)</p> <p><strong>দুই. স্বভাব ও কাজে সচেতনতা :</strong> হাফেজ ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘মুমিন হবে বিচক্ষণ ও সচেতন। তার ভেতর কোনো প্রকার অসচেতনতা থাকবে না, যাতে সে বারবার প্রতারিত না হয়। কেউ কেউ বলেন, মুমিন দুনিয়ায় কোনো অপরাধ করার পর শাস্তি হলে তাকে পরকালে শাস্তি দেওয়া হবে না। আমি বলি, ব্যাপকার্থে এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করা সম্ভব। তবে মূল উদ্দেশ্য অসচেতনতা থেকে সতর্ক করা এবং স্বভাবজাত বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা ব্যবহার করা।’ (ফাতহুল বারি : ১০/৫৩০)</p> <p> </p> <p><strong>সচেতনতা ঈমানের দাবি</strong></p> <p>প্রাত্যহিক জীবনে সচেতনতা ঈমানের দাবি। মুমিন তার ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জীবনের ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন। সে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন—তোমরা যদি মুমিন হও তবে কখনো অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি কোরো না।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৭)</p> <p>সুতরাং মুমিন সেসব স্বভাব-চরিত্র পরিহার করবে যা তার ভেতর অসচেতনতা তৈরি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ধৈর্য ও স্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০১২)</p> <p>অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিই সহনশীল ও ধৈর্যশীল হয় এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান হওয়া যায় না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৩)</p> <p><strong>লেখক :</strong> সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা</p>