<p>ইসলামী জ্ঞানের জগতে মুসলিম নারীদের বিচরণ চিরস্মরণীয়। সভ্যতা বিনির্মাণে নারীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ও অবদান আছে। তাই দেখা যায়, অগণিত মহীয়সী নারী হাদিস, ফিকাহ, সাহিত্য, কবিতা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, রাজনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে উজ্জ্বল কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।</p> <p>আয়েশা (রা.) : হাদিস ও ফিকাহসহ জ্ঞানের বহুমুখী শাখায় বিচরণ ছিল নবীপত্নী আয়েশা (রা.)-এর। যিনি হাদিস, ফিকাহ, ইতিহাস, সাহিত্য, কুলুজীশাস্ত্র, যুদ্ধবিদ্যা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন। তিনি রাসুল (সা.) থেকে দুই হাজার ৮১টি হাদিস বর্ণনা করেন। তাঁর থেকে ২৯৯ জন সাহাবি ও তাবেয়ি হাদিস বর্ণনা করেন। যাঁদের মধ্যে ৬৭ জন নারী ছিলেন। আয়েশা (রা.) অনেক মাসআলায় অন্যান্য সাহাবির ওপর প্রাধান্য লাভ করেন। সে বিষয় নিয়ে ‘আল-ইজাবাহ লিইরাদি মাসতাদরাকাতহু আয়েশা আলাস সাহবাহ’ নামে একটি গ্রন্থ রচিত হয়। (আলামুন নিসা : ৩/৯)</p> <p>উম্মে সালমা (রা.) : উম্মে সালমা (রা.) ছিলেন ইসলামী আইন বিষেশজ্ঞ। তিনি রাসুল (সা.) থেকে অনেক হাদিস বর্ণনা করেন এবং তাঁর থেকে প্রায় ১০১ জন সাহাবি ও তাবেয়ি হাদিস বর্ণনা করেন, যাঁদের মধ্যে ২৩ জন নারী ছিলেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৪/৫০৭)</p> <p>উম্মুহাতুল মুমিনিন ছাড়াও আরো অনেক নারী সাহাবি রাসুল (সা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন। যেমন আসমা বিনতে ইয়াজিদ ৮১টি হাদিস বর্ণনা করেন। আসমা বিনতে উমাইস ৬০টি, উম্মে হানি ৪৬টি, উম্মে আতিয়্যাহ ৪০টি হাদিস বর্ণনা করেন। (জুহুদুল মারআ ফি নশরিল হাদিস, পৃষ্ঠা  ২৪১)</p> <p>হাফসা বিনতে সিরিন : বিখ্যাত তাবেয়ি ইবনে সিরিন (রহ.)-এর মেয়ে। ৩১ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাদিস, ফিকাহ ও তাফসির শাস্ত্রে  ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। ইয়াহইয়া ইবনে সিরিন, ইয়াস ইবনে মালেক, উম্মে আতিয়্যাহ প্রমুখ থেকে হাদিস বর্ণনা করেন। (আলামুন নিসা : ১/২৭২)</p> <p>কারিমা আল-মারওয়াজিয়াহ : জগদ্বিখ্যাত হাদিসবিশারদ ছিলেন তিনি। ইবনুল আহতাল তাঁকে হাদিসের হাফেজ বলেছেন। আবুল হাইসাম থেকে তিনি হাদিস বর্ণনা করেন। হেরাতের আলেমরা তাঁর থেকে সহিহ বুখারির শিক্ষা গ্রহণের জন্য ছাত্রদের বিশেষভাবে নির্দেশ দিতেন। খতিব বাগদাদিসহ অনেক আলেম তাঁর থেকে হাদিসের সনদ গ্রহণ করেন। (আলামুন নিসা : ৪/২৪০)</p> <p>আসমা বিনতে আসাদ : আসমা বিনতে আসাদের বাবা ছিলেন ইমাম আবু ইউছুফ (রহ.)-এর সঙ্গী। বাবার তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন এবং তাঁর থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি তৎকালীন বড় বড় আলেমের পাঠেও উপস্থিত হন। হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন তিনি। ২৫০ হিজরিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (ফকিহাতুন আলিমাতুন, পৃষ্ঠা ১৭)</p> <p>আমাতুর রহিম বিনতে কুসতুলানি : তিনি মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আলকুসতুলানির মেয়ে। বাবার কাছেই হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। মুহাম্মদ আল-ওয়ানি তাঁর কাছে বেশ কিছু হাদিসের কিতাব অধ্যয়ন করেন। ৭১৫ হিজরিতে তিনি আলেকজান্দ্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। (আলামুন নিসা : ১/৮৬)</p> <p>আমাতুল ওয়াহিদ বিনতে হুসাইন : শাফেয়ি মাজহাবের আইনবিদ ছিলেন আমাতুল ওয়াহিদ বিনতে হুসাইন। তিনি নিজেই ফতোয়া দিতেন এবং হাদিস বর্ণনা করতেন। অনেক আলেম তাঁর কাছে হাদিস লিপিবদ্ধ করেন। এ ছাড়া তিনি উত্তরাধিকার বণ্টন আইন, গণিত ও আরবি ব্যাকরণ শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। (তারিখে বাগদাদ, পৃষ্ঠা ১৬)</p> <p>ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ সমরকন্দি : ‘তুহফাতুল ফুকাহা’ গ্রন্থের লেখক মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আস-সমরকন্দির মেয়ে ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ সমরকন্দি। বাবার কাছে হানাফি মাজহাবের জ্ঞান অর্জন করেন তিনি। ফিকাহশাস্ত্রে তাঁর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ফতোয়া দিতেন এবং বিভিন্ন লিখিত ফতোয়ায় স্বাক্ষর করতেন। হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রে তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ হলো ‘মাজমাউল ফাওয়াইদ লিজাম্মিল আওয়াইদ শরহু তুহফাতিল মুলুক’। (আলামুন নিসা : ৪/৯৪)</p> <p>হুমাইদা আর-রুওয়াইদিসিয়্যা : হাদিস ও রিজাল শাস্ত্রের প্রাজ্ঞবান ব্যক্তিত্ব হুমাইদা আর-রুওয়াইদিসিয়্যা। বাবা মুহাম্মাদ আশ-শরিফ আল-ইস্পাহানির কাছে হাদিসের জ্ঞান অর্জন করেন। ওই সময় ‘নারীদের শিক্ষিকা’ নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। আল্লামা তুসি লিখিত ‘আল-ইসতিবসার’ গ্রন্থে পাদটীকা সংযোজন করেন তিনি। পরবর্তীকালে বইটি আলেমরা রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তিনি অনেক হাদিসগ্রন্থের ব্যাখ্যা লেখেন এবং পাদটীকা সংযোজন করেন। (আলামুন নিসা : ১/২৯৮)</p>