<p>জিনা-ব্যভিচারে প্ররোচিত হওয়ার প্রথম ধাপ কুদৃষ্টি বা চোখের নিষিদ্ধ ব্যবহার। চোখের নিষিদ্ধ ব্যবহার ইহকালীন ও পরকালীন ক্ষতির কারণ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, চোখের জিনা হলো দেখা, জিহবার জিনা হলো কথা বলা। কুপ্রবৃত্তি কামনা ও লালসা সৃষ্টি করে আর যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩) </p> <p>ইসলাম চোখের অবারিত ব্যবহারের সুযোগ রাখেনি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘মুমিনদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩০)</p> <p>কাজেই দৃষ্টি সংযত রাখা আবশ্যক। এটা আমরা জানি এবং স্বীকারও করি। তবে এর স্বরূপ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। বাস্তব জীবনে দৃষ্টির সংযম কিভাবে করতে হবে, তা জানতে হাদিসের দিকে যাওয়া যাক। একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো : পরনারীর প্রতি আকস্মিক দৃষ্টি পড়লে কী করণীয়? তিনি বলেন, ‘তোমার চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪৮)</p> <p>আরেকটি হাদিসে দেখা যায়, রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রথমবার দৃষ্টি পড়ে গেলে আর দ্বিতীয়বার তাকিয়ে দেখো না। প্রথমবারের (অনিচ্ছাকৃত) দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ, কিন্তু দ্বিতীয়বারের দৃষ্টি বৈধ নয়।’ (মুসনাদ আহমাদ, আবু দাউদ ও তিরমিজি)</p> <p>অনেকে বলে থাকেন, ‘খারাপ দৃষ্টিতে না দেখলেই হলো। আমরা তো খারাপ কিছু করছি না।’</p> <p>আসলে এই কথাগুলো শয়তানের ধোঁকা। এ ধরনের কথা আল্লাহর বিধান থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র। মনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই জানেন কোনটা আমাদের জন্য ভালো আর কোনটা মন্দ। যদিও তাঁর কোনো কোনো বিধানের রহস্য উদ্ঘাটন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।</p> <p>নারী-পুরুষের সহজাত আকর্ষণ আল্লাহরই দান। এটি পার্থিব জীবনে পরীক্ষার উপকরণ। তাই মহান আল্লাহ পর্দার বিধান দিয়েছেন। আপনি হয়তো নারীকে নিয়ে বাজে চিন্তা করবেন না, কিন্তু আরেকজন করবে। বরং বাজে চিন্তা করবে—এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। এই পুরো সমস্যাটার মূলোৎপাটন করা হয়েছে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করার মাধ্যমে।</p> <p>এখানে আরেকটি কথা উল্লেখযোগ্য। ‘খারাপ কিছু’ বলতে কী বোঝাতে চাই আমরা? আল্লাহর একটা বিধান অমান্য করা হচ্ছে—এর চেয়ে খারাপ আর কী আছে? আমার দৃষ্টিতে ভালো-খারাপ বিচার করলে তো হবে না, আল্লাহর দেওয়া মানদণ্ড দিয়ে বিচার করতে হবে। কারণ, ইসলামের মূল কথাই হলো ‘আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ’।</p> <p>হে মুসলিম যুবক, আপনি স্মরণ করুন আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সতর্কবাণী।</p> <p>কিয়ামতের দিন প্রত্যেক আদম সন্তানের পা একবিন্দু সামনে বাড়তে দেওয়া হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর নেওয়া হবে। তা হলো—(১) তোমার জীবন কিভাবে কাটিয়েছ? (২) তোমার যৌবন কিভাবে কাটিয়েছ? (৩) তোমার আয় কোথা থেকে করেছ? (৪) তা কোথায় ব্যয় করেছ? (৫) অর্জিত জ্ঞান অনুপাতে কতটুকু আমল করেছ? (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭)</p> <p>যৌবন আল্লাহর দেওয়া এক শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এর অন্যায় ব্যবহার করা যাবে না; বরং আল্লাহর পথে ফিরে আসার এটাই সেরা সময়। এই বয়সের ইবাদত আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়।</p> <p>আল্লাহর ওপর ভরসা করে নিম্নোল্লিখিত কয়েকটি করণীয় নির্ধারণ করে নিন—</p> <p>►    গায়রে মাহরাম নারীদের সঙ্গে দেখা করা ও কথা বলা ত্যাগ করুন। সেটা খালাতো/মামাতো/চাচাতো/ফুফাতো বোন হোক, ভাবি/চাচি/মামি হোক, আর ক্লাসমেট/কলিগ হোক। ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’, ‘বোনের মতো’, ‘মায়ের মতো’—এমন ধোঁকায় পড়বেন না।</p> <p>►    টেলিভিশন দেখা ত্যাগ করুন।</p> <p>►    মোবাইল/ল্যাপটপ থেকে সব মুভি/নাটক/গান ডিলিট করে দিন।</p> <p>►    ফ্রি-মিক্সিংয়ের আশঙ্কা আছে এমন জায়গায় যাওয়া পরিহার করুন। যেতে বাধ্য হলে নারীদের থেকে দূরে থাকুন।</p> <p>►    ফেসবুকে কারো পোস্ট লাইক-শেয়ার-কমেন্টের কারণে আপনার নিউজফিডে হারাম কিছু এলে তাকে আনফলো করে দিন।</p> <p>►    কোরআন-হাদিস পড়ার পেছনে সময় দিন।</p> <p>►    দ্বিনি ভাইদের সঙ্গে সময় কাটান। একা থাকবেন না।</p> <p>►    বিয়ে করুন। সেটি সম্ভব না হলে নফল রোজা রাখুন।</p> <p>►    আল্লাহর কাছে সাহায্য চান।</p> <p> </p> <p>প্রথম প্রথম কঠিন লাগতে পারে, কিন্তু আল্লাহর সাহায্য থাকলে অবশ্যই সহজ হয়ে যাবে। আল্লাহর ওপর ভরসা করুন। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করুন। আল্লাহর আজাবকে ভয় করুন। জান্নাতের আশা করুন। জাহান্নামকে ভয় করুন। ধৈর্য ধরে সরল পথে অটল থাকুন। এই পথের শেষ সীমানায় আছে অনন্ত সুখের উৎস জান্নাত। হে মুসলিম যুবক! জান্নাত তোমার অপেক্ষায়!</p> <p> </p>