<p>ইসলামী শরিয়তের একটি মূলনীতি হলো ‘আত-তালাজুমু বাইনাল জাহিরি ওয়াল বাতিনি’ অর্থাৎ ঈমান ও ইসলাম পরিপালনে বান্দার ভেতর ও বাহির একই রকম হবে এবং তার বাহির ভেতর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। এই মূলনীতির ভিত্তি সেসব আয়াত ও হাদিস যাতে মুমিনকে ইখলাস ও সততার সঙ্গে ‘শরিয়ত’ পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্তে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে, নামাজ কায়েম করতে এবং জাকাত দিতে। এটাই সঠিক দ্বিন।’ (সুরা বায়্যিনাত, আয়াত : ৫)</p> <p>মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সব কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভর করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১)</p> <p>ইবাদত পালনের মুমিনের শারীরিক কসরতের সঙ্গে যখন অন্তরের নিষ্ঠা যুক্ত হবে তখনই সে পুরস্কার ও প্রতিদানের যোগ্য হবে।</p> <p> </p> <p><strong>ভেতর</strong> <strong>ও</strong> <strong>বাহির</strong> <strong>এক</strong> <strong>হতে</strong> <strong>হবে</strong> <strong>কেন</strong><strong>?</strong></p> <p>ঈমান ও ইসলামের ক্ষেত্রে ইসলাম ভেতর ও বাহির এক হওয়া তথা ইখলাস ও নিষ্ঠা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছে যেন মুমিন ব্যক্তি তার জীবনে পরিশুদ্ধ হতে পারে। তার সামগ্রিক জীবনে সে সততার সুফল লাভ করতে পারে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মানবদেহে একটি মাংসপিণ্ড রয়েছে। যখন তা পরিশুদ্ধ হয়, তখন সমস্ত শরীর পরিশুদ্ধ হয়ে যায় আর যখন তা অপরিশুদ্ধ হয়ে যায়, তখন সমস্ত শরীর অপরিশুদ্ধ হয়ে যায়। সাবধান! সেটা হলো কলব (হৃদয় বা অন্তর)।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২)</p> <p> </p> <p><strong>বাহির</strong> <strong>ভেতরের</strong> <strong>অনুগত</strong></p> <p>আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রা.) বলেন, ‘ঈমান হলো কথা ও কাজের সমন্বিত রূপ। বাহ্যিক কথা ও অন্তরের কথা, বাহ্যিক কাজ ও অন্তরের কাজ সব কিছু মিলিয়েই ঈমান। মানুষের বাহির তার ভেতরের অনুসারী ও অনুগত। যখন তার ভেতর ঠিক হয়ে যায়, তখন বাহিরও ঠিক হয়ে যায়। যখন ভেতর নষ্ট হয়ে যায়, তখন বাইরে তা প্রকাশ পায়। এ জন্য জনৈক ব্যক্তির নামাজ দেখে একজন সাহাবি বলেছিলেন, ‘যদি তার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকত, তবে তা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও প্রকাশ পেত।’ (আল ঈমান, পৃষ্ঠা ১৫৯)</p> <p> </p> <p><strong>বাহ্যিক</strong> <strong>আচরণে</strong> <strong>প্রকাশ</strong> <strong>পায়</strong> <strong>ভেতরটা</strong> <strong>কেমন</strong></p> <p>মানুষের বাহ্যিক আচরণ ভেতর অনুগত হওয়ার প্রমাণ হলো, তার বাহ্যিক আচরণে ভেতরের বোধ-বিশ্বাস ও ধারণা প্রকাশ পায়। বাহ্যিক আচরণই প্রমাণ করে দেয় ব্যক্তি সৎ নাকি অসৎ, সে মুমিন নাকি অবিশ্বাসী। ইমাম শাতেবি (রহ.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিকে যদি ভালো-মন্দের নির্ণায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং বস্তুর ওজন ঠিক আছে কি না—তা নির্ধারণে সে যদি সততার পরিচয় দেয় তবে বুঝতে হবে তার ভেতরটাও ঠিক আছে। আর যদি সে সততার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয় তবে বুঝতে হবে তার ভেতরটাও ঠিক নেই। সে ন্যায়পরায়ণ হিসেবে প্রমাণিত হবে না।’ (আল মুওয়াফাকাত : ১/৩৬৭)</p> <p>পবিত্র কোরআনেও মানুষের বাহ্যিক আচরণকে ঈমান ও ইসলামের পরিচায়ক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি তাদের প্রশ্ন করলে নিশ্চয়ই তারা বলবে, আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম। বলুন! তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শনগুলো ও তাঁর রসুলকে বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা অজুহাত দেখানোর চেষ্টা কোরো না; বরং তোমরা ঈমানের পর কুফরি করেছ।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৬৫-৬৬)</p> <p>অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আল্লাহ, নবী ও তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার ওপর ঈমান আনত, তবে তারা তাদের (অবিশ্বাসীদের) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮১)</p> <p> </p> <p><strong>সংশয়</strong> <strong>ও</strong> <strong>অবিশ্বাস</strong> <strong>লুকানো</strong> <strong>যায়</strong> <strong>না</strong></p> <p>অনেকের ধারণা সমাজে এমন এক শ্রেণির ‘বর্ণচোরা’ মানুষ থাকে যাদের পরিচয় কোনোভাবেই প্রকাশ পায় না এবং তারা তাদের স্বার্থসিদ্ধি করে যায়। তবে কোরআনের ভাষ্য থেকে বোঝা যায় কিছু মানুষের পরিচয় আল্লাহ সরাসরি প্রকাশ করেন না, তবে তাদের সংশয়, অবিশ্বাস ও মনের ময়লা সূক্ষ্মভাবে হলেও প্রকাশ পেয়ে যায়—যা বিচক্ষণ মানুষের চোখ এড়ায় না। আল্লাহ বলেন, ‘আমি ইচ্ছা করলে আপনাকে তাদের পরিচয় দিতাম। ফলে লক্ষণ দেখে আপনি তাদের চিনতে পারতেন। তবে আপনি অবশ্যই তাদের কথার ভঙ্গিতে তাদের পরিচয় পাবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ সম্পর্কে অবগত।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ৩০)</p> <p> </p> <p><strong>অন্তরের</strong> <strong>পরিশুদ্ধতাই</strong> <strong>চূড়ান্ত</strong> <strong>মাপকাঠি</strong></p> <p>অন্তরের বিশ্বাস ও বাহ্যিক আমলের সমন্বিত রূপই ঈমান। অন্তরের ঈমান মানুষের আমলের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। তবে অন্তরের পরিশুদ্ধতাই চূড়ান্ত মাপকাঠি। যদি কখনো ব্যক্তিকে জোরপূর্বক কোনো অন্যায় কাজে বাধ্য করা হয় কিন্তু তার অন্তরে ঈমান অক্ষুণ্ন থাকে তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহে অস্বীকার করলে এবং হৃদয় কুফরির জন্য উন্মুক্ত রাখলে তার ওপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তার জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি; তবে তার জন্য নয়—যাকে কুফরি করতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু তার অন্তর ঈমানে অবিচলিত।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১০৬)</p>