<p>আমাদের দেশে জমিজমা চাষবাস ও এসংক্রান্ত অনেক ধরনের লেনদেন চলে। এগুলোর শরয়ি বিধানাবলিও ইসলামী ফিকাহ ও ফাতাওয়ার কিতাবগুলোয় উল্লেখ রয়েছে। আমরা এখানে বিশেষ কিছু মাসআলা নিয়ে আলোচনা করতে চাই।</p> <p>বর্গাচাষ : এটা হচ্ছে একজনের জমিতে অপরজন শ্রম দিয়ে চাষ করে উভয়ে পূর্বচুক্তি অনুসারে উৎপাদিত ফসল সমান অর্ধেক করে বা কমবেশি ভাগ করে  নেবে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদনের প্রাসঙ্গিক অন্যান্য খরচ ও ব্যয়ভারের শরিয়তসম্মত তিনটি পদ্ধতির যেকোনো একটি গ্রহণ করা যেতে পারে।</p> <p>১.       জমি এবং বীজ একজন বহন করবে আর চাষাবাদের যাবতীয় খরচ দ্বিতীয় জন বহন করবে।</p> <p>২.        শুধু জমি একজনের আর চাষাবাদের জন্য যাবতীয় খরচ দ্বিতীয় জন আঞ্জাম দেবে।</p> <p>৩.       জমি এবং বীজসহ হালের জন্য গরু অথবা মেশিনের খরচ একজন বহন করবে আর দ্বিতীয় জন শুধু কাজ করবে।</p> <p>এই তিনটি ছাড়া অন্য পদ্ধতি শরিয়তসম্মত নয়। (ফাতহুল কাদির : ৯/৪৭৬)</p> <p><strong>জমি</strong> <strong>বন্ধক</strong> <strong>রাখার</strong> <strong>প্রচলিত</strong> <strong>পদ্ধতি</strong></p> <p>বন্ধক রাখা হয় ঋণ আদায়ের নিশ্চয়তাস্বরূপ। এতে ঋণদাতা নিশ্চিত থাকেন যে ঋণ আদায় না করলেও বন্ধককৃত বস্তু থেকে আদায় করে নেওয়া যাবে। পবিত্র কোরআনেও এর নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা সফরে থাকো এবং কোনো লেখক না পাও, তাহলে হস্তান্তরিত বন্ধক রাখবে। আর যদি তোমরা একে অপরকে বিশ্বস্ত মনে করো, তবে যাকে বিশ্বস্ত মনে করা হয়, সে যেন স্বীয় আমানত আদায় করে এবং নিজ রব আল্লাহকে ভয় করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৩)</p> <p>বন্ধককৃত বস্তু বন্ধকগ্রহীতার কাছে আমানতস্বরূপ। বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতার কোনো ফায়দা হাসিল করা নাজায়েজ ও হারাম। এমনকি বন্ধকদাতা এর অনুমতি দিলেও পারবে না। কারণ বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতা কোনো ধরনের ফায়দা উপভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত, যা হারাম। (বাদায়েউস সানায়ে : ৬/১৪৬)</p> <p>ইবনে সিরিন (রহ.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক লোক সাহাবি ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে, তা আমি আরোহণের কাজে ব্যবহার করেছি। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তুমি আরোহণের মাধ্যমে এর থেকে যে উপকার লাভ করেছ তা সুদ হিসেবে গণ্য হবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৭১)</p> <p>বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম কাজি শুরাইহ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সুদ পান করা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বলেন, বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকি গাভির দুধ পান করা সুদ পানের অন্তর্ভুক্ত। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৬৯)</p> <p><strong>প্রচলিত</strong> <strong>জমি</strong> <strong>বন্ধক</strong> <strong>পদ্ধতির</strong> <strong>বৈধ</strong> <strong>বিকল্প</strong></p> <p>১. বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতা উপকৃত হতে চাইলে এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে যে বন্ধকি চুক্তি বাতিল করে দীর্ঘমেয়াদি ইজারা পদ্ধতি অবলম্বন করবে। অর্থাৎ যত দিন পর্যন্ত ঋণের টাকা শোধ না হয় ঋণদাতা জমিটি ইজারা পদ্ধতিতে তা ভোগ করবে এবং তার ন্যায্য ভাড়াও মালিককে আদায় করবে। এ ক্ষেত্রে ঋণ ও ইজারাচুক্তি দুটি ভিন্ন হতে হবে, দুটি চুক্তিকে মিলিয়ে একটি অপরটির ওপর শর্তযুক্ত হতে পারবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৪৬৫, ইমদাদুল আহকাম ৩/৫১৮)</p> <p>২. অথবা সে বন্ধকদাতার সঙ্গে ‘বাই বিল ওয়াফা’ চুক্তি করবে। অর্থাৎ বন্ধকগ্রহীতার কাছে ঋণী ব্যক্তি তার জমিটি বিক্রি করে দেবে এই ওয়াদার ওপর যে ঋণ পরিশোধ হওয়ার পর বন্ধকগ্রহীতা আবার জমিটি তার কাছে বিক্রি করে দেবে। এ ক্ষেত্রে বন্ধকগ্রহীতার মালিকানায় যত দিন থাকবে সে তা মালিক হিসেবে ভোগ করতে পারবে। (ইমদাদুল আহকাম : ৩/৫১১)</p> <p><strong>ইজারা</strong> <strong>কী</strong><strong>?</strong></p> <p>স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে জমি ইজারা তথা ভাড়া দেওয়া বৈধ। ভাড়া নিয়ে যেকোনো বা এমন বৈধ কাজে লাগানো জায়েজ হবে যার কারণে জমির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি না হয়। জমির মালিক যদি ইজারাদারকে সাধারণভাবে সব ধরনের ফসল চাষ করার অনুমতি দিয়ে দেয়, তাহলে সে যেকোনো শস্য চাষ করতে পারবে। (হেদায়া ৩/২৯৬)। গাছসহ বাগান ইজারা দেওয়া শুদ্ধ নয়। (রদ্দুল মুহতার ৫/৫)</p> <p>গাছের ফল বের হওয়ার আগে ফল বিক্রি বৈধ নয়। বরং ফলের মুকুল বের হওয়ার পর বিক্রি বৈধ হবে। অনুরূপ অগ্রিম কয়েক বছরের জন্য বাগানের ফল বিক্রি বৈধ নয়।</p> <p>তবে এর একটি বৈধ পদ্ধতি এভাবে হতে পারে যে ফলগাছ বিক্রি করে দেবে এবং মালিক বিক্রীত গাছ তার বাগানে রাখার জন্য ক্রেতাকে অনুমতি দিয়ে দেবে। অথবা গাছ বিক্রির পর ক্রেতা মালিক থেকে বাগান ভাড়া নেবে। পরবর্তীকালে ইচ্ছা করলে ফলের মৌসুম শেষ হলে কিংবা কয়েক বছর পর আবার ওই মূল্যে বা এর চেয়ে কমবেশি দিয়ে গাছগুলো মালিকের কাছে বিক্রি করে দেবে। (রদ্দুল মুহতার ৫/২০, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/২৬৭)</p> <p>লেখক : ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।</p>