<p><strong>নন্দলাল ভর্তিয়া নামে জনৈক পাঠক পত্রযোগে জানতে চেয়েছেন যে ইসলাম হিজড়াদের কিভাবে মূল্যায়ন করে। এ বিষয়ে এর আগে আমাদের কয়েকটি লেখা ছাপা হয়েছিল। তবু এখানে সংক্ষিপ্তভাবে প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া হলো—বি.স.</strong></p> <p> </p> <p>হিজড়া নারী-পুরুষের বাইরে আরেকটি লিঙ্গবৈচিত্র্যের মানবধারা। যৌন-বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে আমরা ছয় ধরনের হিজড়ার অস্তিত্ব সমাজে পাই। হিজড়া মানববিশেষ লৈঙ্গিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিকশিত হয়, তার লিঙ্গ অনুপযোগী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিকলাঙ্গ। ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী হিজড়া হচ্ছে সে, যার পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয়টিই রয়েছে অথবা কোনোটিই নেই। শুধু প্রস্রাবের জন্য একটি ছিদ্রপথ রয়েছে। একই দেহে স্ত্রী ও পুরুষ চিহ্নযুক্ত অথবা এই উভয় চিহ্নবিযুক্ত মানুষটি হলো হিজড়া। [সূত্র : মাওলানা ইসমাঈল মাহমুদ : ‘প্রসঙ্গ হিজড়া : ইসলামী দৃষ্টিকোণ’, বাতায়ন, ইসলামী গবেষণা সাময়িকী, বসিলা, ঢাকা, মে ২০১৫ সংখ্যা, পৃষ্ঠা ৭৬]</p> <p>মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী হিজড়ারা মা-বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবে। তাদের বঞ্চিত করা আইনের বরখেলাপ হবে। তবে তারা উত্তরাধিকার সম্পদে নারী হিসেবে পাবে নাকি পুরুষ হিসেবে পাবে, তা-ও শরিয়ায় নিশ্চিত করা আছে। যে হিজড়া নারী বা পুরুষ প্রকৃতির, সে নারী বা পুরুষের মানদণ্ডেই উত্তরাধিকার সম্পদ পাবে, আর যে নারী নাকি পুরুষ, এর কোনোটিই চিহ্নিত করা যায় না, সে তার প্রস্রাবের পথের অবস্থা অনুযায়ী ভাগ পাবে। [সূত্র : সুনানে বায়হাকি, হাদিস নম্বর : ১২২৯৪ (অবলম্বনে)]</p> <p>‘নপুংসক’ অর্থ ধরে কাউকে ‘হিজড়া’ বলে গালি দেওয়া যাবে না। কাউকে ‘মন্দ নামে ডাকা গুনাহ’। (পবিত্র কোরআন, সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)</p> <p>ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ মহান আল্লাহর হুকুমে লৈঙ্গিক বৈচিত্র্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই মহান সত্তা, যিনি মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী এবং প্রজ্ঞাময়।’ (পবিত্র কোরআন, সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৬)</p> <p>আল্লাহ তাআলার কাছেও তাই বাহ্যিক আকার-আকৃতির কোনো মূল্য নেই। কারণ এ আকৃতি তাঁর নিজের ইচ্ছায়ই হয়েছে, মানুষের এতে কোনো হাত নেই। হাশরের ময়দানে তিনি দেখবেন শুধু মানুষের আমল। (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৬৭০৮)</p> <p>বর্তমানে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার লোভে অনেক সুস্থ মানুষও হিজড়া সেজে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের একটি চাকরিতে হিজড়া কোটা থাকায় অনেক তরুণ-যুবক হিজড়া হিসেবে নিজেদের নাম লেখায়। কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হওয়ায় তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা করে দেখা যায়, তারা সবাই সুস্থ। ইদানীং আরেকটি ঘটনা সংক্রমণ হচ্ছে, আর তা হলো, অনেক প্রাইভেট হাসপাতাল তরুণ-যুবকদের অস্ত্রোপচার করে লিঙ্গ কর্তন করে দিচ্ছে। অনেককে ওষুধ খাইয়েও হিজড়া বানানোর চেষ্টা চলে। অথচ ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ওই সব পুরুষের ওপর অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং ওই সব নারীর ওপরও অভিশাপ করেছেন, যারা পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং মহান আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করে। (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর : ৩৮৮৫)</p> <p>ইসলাম হিজড়াদের পূর্ণাঙ্গ মানুষ মনে করে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অঙ্গ ও আকৃতির ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করা হয়নি। আল্লাহ তাআলার কাছে সব ত্রুটিহীন অথবা ত্রুটিপূর্ণ মানুষই সমান এবং হাশরের ময়দানে সব ধরনের মানুষই জিজ্ঞাসিত হবে। সে জন্য নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত—সব কিছু পালন করাই হিজড়াদের জন্য ফরজ।</p> <p>ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী একজন হিজড়া নারীদের নামাজে প্রয়োজনে ইমামতিও করতে পারবে। নামাজে পর্দা করতে হবে, নামাজে বসার ক্ষেত্রে নারীদের মতো বসবে। হজ করতে পারবেন হিজড়া মুসলিম, তবে এ ক্ষেত্রে একজন মাহরাম পুুরুষ বেছে নিতে হবে এবং নারীদের মতোই হজের সব নিয়ম-কানুন তিনি পালন করবেন।</p> <p>হিজড়া নারী-পুরুষ পরস্পর বিয়ে করতে পারবে। তবে শর্ত থাকবে, সহবাসে তাদের সক্ষম হতে হবে। কোনো প্রকৃত হিজড়ার স্তনে যদি দুধ আসে, তা কাউকে পান করানো দ্বারা বৈবাহিক নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হবে না।</p> <p>মৃত্যুর পর হিজড়াকে গোসল না দিয়ে তায়াম্মুম করানোই বিধান। এবং মৃত নারীদের মতো পাঁচ কাপড়ে কাফন পরাতে হবে। মুসলিম হিসেবে তার নামাজে জানাজা হবে। কবরে নামানোর সময় লাশ ওপর থেকে চাদর দ্বারা পর্দাবেষ্টিত থাকবে।</p> <p>[সূত্র : মাওলানা ইসমাঈল মাহমূদ : ‘প্রসঙ্গ হিজড়া : ইসলামী দৃষ্টিকোণ’, বাতায়ন, পূর্বোক্ত]</p> <p>হিজড়াদের বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি আরো বিস্তারিত জানতে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত কয়েকটি লেখার লিংক দেওয়া হলো—shorturl.at/efuHP</p> <p>shorturl.at/eswK2</p> <p>shorturl.at/hikDQ</p>