<p>এখন জানুয়ারি মাস। প্রতিবছর এই মাসজুড়ে বিভিন্ন কম্পানি নতুন বছরের ক্যালেন্ডার বিলি করে থাকে। বলা যায়, বড় বড় কম্পানিগুলো তাদের কর্মচারী, গ্রাহক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের নতুন বছরের উপহারস্বরূপ ক্যালেন্ডার, ডায়েরিসহ আরো অনেক কিছু দিয়ে থাকে।</p> <p>অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, এই ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি কোথা থেকে এলো। জানা যায়, তার ভিত্তি ছিল চাঁদ। কেননা গ্রহ-নক্ষত্র ছাড়া চাঁদের কলার হ্রাস-বৃদ্ধির মতো এত বড় ঘটনা মানুষের নজর এড়াতে পারেনি। এ ছাড়া ঋতু পরিবর্তন ও আবার আবর্তনের তুলনায় চাঁদের পরিবর্তনের সময় অপেক্ষাকৃত কম। ১৯৬৫ সালের কথা। ফ্রান্সে পাওয়া গেল ৩০ হাজার বছরের পুরনো হাড়ের টুকরা। এর একপাশে আছে ৬৯টি আলাদা দাগ। অনেকে ধারণা করলেন দাগগুলো শুধুই শিকারের হিসাব। তবে সেটা মানতে পারেননি একজন ব্যক্তি, নাম তাঁর আলেকজান্ডার মাশরাক। তিনি মাইক্রোস্কোপের নিচে দাগগুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করলেন এবং সিদ্ধান্তে এলেন যে ওগুলো চাঁদের দশা পরিবর্তনের নমুনা।</p> <p>এই ঘটনা নতুন না। এ রকম আফ্রিকায় পাওয়া গিয়েছিল আরো একটি হাড়, যা আট হাজার ৫০০ বছরের পুরনো। এতে দাগ আছে ১৬৮টি। মাশরাক দেখান যে দাগগুলো সাড়ে পাঁচ মাসে নতুন ও পূর্ণ চাঁদের সঙ্গে খাপ খায়। এ থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে এগুলো দিন গণনা ছাড়া আর কিছু নয়। (বিজ্ঞানবর্তিকা)</p> <p>আমাদের অঞ্চলের মানুষ সাধারণত গ্রেগরিয়ান, বাংলা ও হিজরি ক্যালেন্ডারের সঙ্গেই পরিচিত। কিন্তু পৃথিবীতে প্রায় ৪০ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন—উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইথিওপিয়ার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছর পূর্ণ হয় ১৩ মাসে! মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া বা কপটিক ক্যালেন্ডারের মতো তাদের ক্যালেন্ডারের প্রতিটি মাস ৩০ দিনের হওয়ায় বছরের পাঁচ বা ছয়টি দিন অতিরিক্ত থেকে যায়। আর সেখান থেকেই আসে ১৩তম মাসটি। ১৯১৭ সালে রাশিয়ান বিপ্লবের আগ পর্যন্ত রাশিয়ায় নতুন ক্যালেন্ডার গ্রহণযোগ্য ছিল না। এ কারণে ১৯০৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকে রাশিয়ান দল ১২ দিন দেরিতে পৌঁছায়! আবার ১৭৫২ সালে যখন ব্রিটেনে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করা হয়, তখন জনসাধারণ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিল ১১ দিন হারানোর কারণে!</p> <p>বর্তমান যুগেও ক্যালেন্ডার মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সব শ্রেণির মানুষকেই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে হয়। যদিও নতুন নতুন প্রযুক্তির কারণে প্রিন্ট ক্যালেন্ডারের চাহিদা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, যেহেতু মোবাইল ফোন, হাতঘড়ি, ডিজিটাল ঘড়ির মধ্যেই এখন ক্যালেন্ডারের সুবিধা পাওয়া যায়। তবু বাসা, অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবখানেই প্রিন্ট ক্যালেন্ডারও রাখতে হয়।</p> <p>ক্যালেন্ডার একদিকে যেমন মানুষের তারিখ জানার প্রয়োজন পূরণ করে, তেমনি ক্যালেন্ডারের ডিজাইনও ঘরের শোভা বৃদ্ধি করে। কিন্তু এমন ক্যালেন্ডার ঘরে ঝোলানো উচিত নয়, যার ডিজাইনটি শরিয়ত অসমর্থিত হয়।</p> <p>যেমন—যেসব ক্যালেন্ডারে প্রাণীর ছবি আছে, সেগুলো ব্যবহার করা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। কারণ এর দ্বারা সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আবু তালহা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ফেরেশতা ওই ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর থাকে এবং ওই ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৪৯)</p> <p>তাই আমাদের উচিত, এমন ছবি বা ডিজাইনসংবলিত ক্যালেন্ডার ঘরে না ঝোলানো যেগুলো রহমতের ফেরেশতাদের বাধাগ্রস্ত করবে।</p> <p>আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, জিবরাঈল (আ.) আমার কাছে এসে বলেন, গত রাতে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি প্রবেশ করিনি। কারণ ঘরের দরজায় ছবি ছিল, ঘরের মধ্যে ছিল ছবিযুক্ত পর্দা এবং ঘরে ভেতরে ছিল কুকুর। সুতরাং আপনি ঘরে ঝোলানো ছবির মাথা কেটে দেওয়ার আদেশ করুন, তাহলে তা গাছের আকৃতিতে পরিণত হবে। এর পর্দাটি কেটে দুইটি বালিশের ভেতরের কাপড় বানাতে আদেশ করুন এবং কুকুরটিকে বের করে দেওয়ার হুকুম দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) উপদেশ মতো কাজ করলেন। কুকুরটি ছিল হাসান বা  হোসাইনের এবং তা তাদের খাটের নিচে শুয়ে ছিল। তিনি সেটাকেও বের করে দেওয়ার আদেশ দেন এবং তা বের করে দেওয়া হলো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৫৮)</p> <p>উল্লিখিত হাদিস থেকে আরেকটি জিনিস বোঝা যায়, সেটা হচ্ছে, আমাদের আদরের সোনামণিদের ঘরকে সাজাতে গিয়ে তার দেয়ালে কোনো প্রাণীর ছবি লাগানো যাবে না। প্রাণী আকৃতির বড় বড় পুতুল রাখা যাবে না।</p>