<p><strong>অজুতে চারটি অঙ্গ ধৌত করতে হয় কেন</strong></p> <p>পবিত্রতা মূলত চার ধরনের—</p> <p>►    বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে অপবিত্রতা ও অপরিচ্ছন্নতা থেকে পবিত্র করা।</p> <p>►    অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা ও গুনাহ থেকে বিরত রাখা।</p> <p>►    অন্তরকে নিন্দনীয় ও ঘৃণিত স্বভাব থেকে পরিষ্কার রাখা।</p> <p>►    নিজের অভ্যন্তরকে গাইরুল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া অন্য সব) থেকে মুক্ত রাখা। তাই অজুতে চারটি অঙ্গ ধৌত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p> </p> <p><strong>নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতার সঙ্গে অজু করার কারণ কী</strong></p> <p>কোরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত ধারাবাহিকতার বিপরীত অজু করা মাকরুহ। অজুর অঙ্গগুলোকে ধারাবাহিকভাবে ধৌত করে গুনাহ ও আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা থেকে মুক্ত করার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যেমন—সাধারণত যে অঙ্গ দ্বারা মানুষের সর্বপ্রথম গুনাহ প্রকাশ পায়, সেই অঙ্গকে সর্বপ্রথম ধৌত করার বিধান দিয়ে তাকে গুনাহ বর্জন ও তাওবার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।</p> <p>আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম চেহারা ধৌত করার আদেশ করেছেন। এর মধ্যে মুখ, নাক ও দুই চোখ অন্তর্ভুক্ত। প্রথমে কুলি করার মাধ্যমে মুখ পরিষ্কার করা হয়, এর দ্বারা জবানের তওবার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা মানুষের জবান আল্লাহ তাআলার বিধানের বিরোধিতায় সব অঙ্গের আগে থাকে। এ সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, ‘আদম সন্তানের  বেশির ভাগ গুনাহ তার জবান দ্বারা সংঘটিত হয়।’</p> <p>তেমনিভাবে কুফরি বাক্য, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা, গালিগালাজ এবং হাজারো অশোভন ও অনর্থক কথাবার্তা জবান দিয়ে বের হয়। তারপর নাকে পানি ঢেলে পরিষ্কার করা হয়, যা নিষিদ্ধ ঘ্রাণ ও অহংকারী বোধশক্তি থেকে তাওবা করার ইঙ্গিত। তারপর পুরো চেহারা ও দুই চোখ কপালসহ ধৌত করা হয়, যেটা সামনাসামনি সব গুনাহ এবং চোখের অসৎ দৃষ্টি বর্জনের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। তারপর উভয় হাত ধৌত করা হয়, যা হাতের গুনাহ বর্জনের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। কেননা মানুষ যখন কথা বলে এবং চোখ দিয়ে দেখে তখন হাত দিয়ে ধরে বা স্পর্শ করে। তারপর মাথা মাসেহ করা হয়, ধৌত করা হয় না। মূলত মাথা থেকে সর্বপ্রথম অপরাধ সংঘটিত হয় না; বরং প্রতিবেশী জবান ও চোখের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। তাই মাথার ক্ষেত্রে ধোয়া ও না ধোয়ার মাঝামাঝি মাসেহর বিধান দেওয়া হয়েছে। তারপর কান মাসেহ করা হয়। কেননা বেশির ভাগ সময় মানুষের কানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আওয়াজ প্রবেশ করে। তাই তাকে ধোয়া ও না ধোয়ার মাঝামাঝি মাসেহর বিধান দেওয়া হয়েছে। অনুরূপ ঘাড় মাসেহ করার ক্ষেত্রেও।</p> <p>উল্লিখিত তিনটি অঙ্গ তথা মাথা, কান ও ঘাড়ের মাসেহর ক্ষেত্রে এগুলোর অবাধ্যতা, ন্যায়নিষ্ঠ কথা শ্রবণ না করা ইত্যাদি খারাপ কাজ থেকে তাওবা করার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, এগুলোকে ধোয়ার বিধান প্রদান করা হলে অনেক সমস্যা হতো এবং মানুষ কষ্টে পতিত হতো। কেননা যে ব্যক্তির পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁচবার অজু করা প্রয়োজন পড়ে, তার মাথায় যদি প্রতিবার পানি ঢালতে হয় তাহলে নিঃসন্দেহে এই কাজ তার জন্য অনেক কষ্টের হবে। অথচ আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা চান না তোমাদের কোনো কষ্ট হোক।’</p> <p>তারপর পা ধৌত করা হয়। কেননা চোখ দর্শন করে, জবান কথা বলে, হাত নড়াচড়া করে, কান শ্রবণ করে, আর সবার পরে পা চলে, তাই পা ধৌত করাকে সবার পরে নির্ধারণ করা হয়েছে। কেননা এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার বিরোধিতা সবার পরে সংঘটিত হয়, তাই সবার পরে তার তাওবার সুযোগ এসেছে।</p> <p>তিনবার করে প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করার বিধান দ্বারা তাওবার তিন শর্ত তথা গুনাহর ওপর লজ্জিত হওয়া, গুনাহ বর্জন করা এবং ভবিষ্যতে গুনাহ না করার অঙ্গীকার করার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।</p> <p>ভাষান্তর : মুফতি তাজুল ইসলাম</p> <p> </p>