<p>ঈমান এমন উত্তরাধিকারী সম্পদ নয় যে কারো বাপ-দাদারা ঈমানদার মুসলিম হলে সন্তান-সন্ততি ও বংশধররাও মুসলিমই থাকবে, চাই সে যতই ঈমানবিরোধী চিন্তা-বিশ্বাস ও কথায়-কর্মে জড়িত থাকুক। ঈমান অনেকগুলো আকিদা-বিশ্বাসের সমষ্টি। এগুলো বহির্ভূত কোনো বিশ্বাস, চেতনা বা কথায়-কাজে জড়ালে ঈমান থাকে না; সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে কাফের হয়ে যায়। অজু ভঙ্গের কারণ পাওয়া গেলে যেরূপ অজু ভেঙে যায়, তদ্রূপ ঈমান ভঙ্গের কারণ পাওয়া গেলেও ঈমান ভেঙে যায়। এমনকি সব অস্বীকারের প্রয়োজন নেই, বরং একটিমাত্র ঈমান ভঙ্গের কারণ পাওয়া যাওয়াই কাফের হওয়ার জন্য যথেষ্ট। যেমন—অজু হওয়ার জন্য অজুর সব ফরজ পালন জরুরি, কিন্তু তা ভাঙার জন্য অজুভঙের সব কারণ পাওয়া জরুরি নয়, যেকোনো একটি কারণ দ্বারাই অজু ভেঙে যায়। ঈমান এমন কোনো শক্ত পাথর নয় যে আপনি যতই ঈমানে আঘাত করবেন, আর ঈমানের দাবি করতে থাকবেন—আপনার ঈমান ভাঙবে না। এ তো অজু ভঙ্গের কারণ পাওয়ার পরও অজু থাকার দাবি করার মতো।</p> <p>এমতাবস্থায় ঈমানবিরোধী বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে এসে তাওবা না করে সে মারা গেলে কাফের হিসেবেই মারা গেল। দুনিয়ায় মুসলিমরা তার সঙ্গে কাফেরের মতো আচরণ করবে এবং তার জন্য পরকালে রয়েছে চির জাহান্নাম। এ ফিতনার যুগে ঈমানের ওপর টিকে থাকা কঠিন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এমন এক যুগ আসবে, যখন দ্বিনের ওপর অটল থাকা হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখার মতো কঠিন হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২৬০)</p> <p>অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কিয়ামতের আগে অন্ধকার রাতের ন্যায় এমন ভয়াবহ ফিতনা একের পর এক আসতে থাকবে যে মানুষ সকালে ঈমানদার থাকবে তো বিকেলে কাফের হয়ে যাবে, বিকেলে ঈমানদার থাকবে তো সকালে কাফের হয়ে যাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৫৯)</p> <p>তাই আমরা প্রত্যেকে মাঝেমধ্যে নিজের ঈমান পরীক্ষা করি, যে আল্লাহ না করুন, আমাদের ঈমান এমন তো নয় যে শুধু নামকাওয়াস্তে ঈমান, যা গ্রহণযোগ্য ঈমানের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয় না! যদি বাস্তব অবস্থা এমন হয়, তাহলে এখনই নিজের সংশোধনে মনোযোগী হওয়া অপরিহার্য। নিচে ঈমানবিধ্বংসী কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো :</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/05 May/16-05-2019/Kalerkantho_19-05-16-09.jpg" style="height:409px; width:665px" /></p> <p><strong>কোনো কুফরি বিশ্বাস অন্তরে লালন করা</strong></p> <p>আমাদের ইসলামী আকাইদ সঠিকভাবে জানতে হবে এবং চিন্তা করতে হবে আমার মধ্যে ওই সব আকিদার পরিপন্থী কিছু আছে কি না। ইসলামী আকিদার পরিপন্থী মতবাদগুলোকে বাতিল বিশ্বাস করে এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।</p> <p>এবং বিশ্বাসগত নিফাক (কপটতা) বিদ্যমান থাকাও ঈমানের অন্তরায়। নিফাকের বিভিন্ন প্রকার আছে। একটি হলো বিশ্বাসগত নিফাক। বিশ্বাসগত নিফাকের অর্থ, অন্তরে কুফরি মতবাদ বা ইসলামবিদ্বেষ লালন করেও কথা বা কাজে মুসলিম দাবি করা। এটি কুফরির জঘন্যতম প্রকার। এটা যার মধ্যে আছে, সে সরাসরি কাফের। তবে যথাযথ দলিল-প্রমাণ ছাড়া কারো ব্যাপারে নিফাকের সন্দেহ করা বা কাউকে নিফাকের অভিযোগে অভিযুক্ত করা বৈধ নয়। হ্যাঁ, যখন কারো কথায় বা কাজে নিফাক প্রকাশিত হয়ে পড়ে, অন্তরে লালিত কুফরি আকিদা ও ইসলামবিদ্বেষ মুখেও এসে যায়, তখন তো তার ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক করতেই হবে।</p> <p><strong>বিশ্বাসগত নিফাকের বিভিন্ন রূপ আছে। কয়েকটি নিম্নরূপ :</strong></p> <p>ক. শরিয়ত বা শরিয়তের কোনো বিধানকে অপছন্দ করা।</p> <p>খ. ইসলামের নবী (সা.), কোরআন, ইসলামী নিদর্শনের কিংবা ইসলামের কোনো বিধানের বিদ্রুপ বা অবজ্ঞা করা।</p> <p>গ. ইসলামের কিছু বিশ্বাস ও বিধানকে মানা আর কিছু না মানা।</p> <p>ঘ. শরিয়তের কোনো বিধানের ওপর আপত্তি করা বা কোনো স্থায়ী বিধানকে সংস্কারযোগ্য মনে করা।</p> <p>ঙ. ইসলামের কোনো অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীন আকিদা বা বিধানের অপব্যাখ্যা করা।</p> <p> </p> <p><strong>ইসলামের নিদর্শনাবলি বিষয়ে বিরূপ ধারণা পোষণ</strong></p> <p>শাআইরে ইসলাম হলো ইসলামের মৌলিক আলামত বা নিদর্শন। কলেমা, ইবাদত, আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর ঘর কাবা, অন্যান্য মসজিদ ও ইসলামের অন্যান্য পবিত্র স্থান, বিশেষত মসজিদে হারাম, মিনা, আরাফা, মুজদালিফা, মসজিদে আকসা ও মসজিদ-ই-নববী, হজ ও কোরবানির পশু ইত্যাদি।</p> <p>কোরআন মাজিদে এই নিদর্শনগুলোর মর্যাদা রক্ষার আদেশ করে ইরশাদ হয়েছে, ‘এগুলোর মর্যাদা রক্ষা প্রমাণ করে, অন্তরে তাকওয়া আছে, আল্লাহর ভয় আছে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩২)</p> <p>নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে আমার মধ্যে শাআইরে ইসলামের ভক্তি-শ্রদ্ধা আছে কি না। কেউ এগুলোর অবমাননা করলে আমার কষ্ট হয় কি না। যদি এমন হয় যে কেউ নিদর্শনাবলির অবমাননা করছে, আর আমি একে তার ব্যক্তিগত বিষয় মনে করে নীরব ও নির্লিপ্ত থাকছি, এই কুফরি কার্যকলাপ ও অশোভন আচরণ সম্পর্কে আমার মনে ঘৃণা জাগছে না, আর না এই বেআদবের বিষয়ে আমার অন্তরে কোনো বিদ্বেষ! শাআইরের বিষয়ে এই যদি হয় আমার আচরণ-অনুভূতি, তাহলে নিশ্চিত বুঝে নিতে হবে, অন্তর একেবারেই ঈমানশূন্য।</p> <p> </p> <p><strong>আল্লাহকে বিধানদাতা মেনে নিতে সংশয় করা ঈমানের অন্তরায়</strong></p> <p>মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব ও পরিচালনা যাদের ওপর ন্যস্ত, তাদের ফরজ দায়িত্ব ইসলামী নীতি ও বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, হদ, কিসাস ও ইসলামী দণ্ডবিধি কার্যকর করা, রাষ্ট্র পরিচালনার (আইন, বিচার, নির্বাহী) ক্ষেত্রে নতুন-পুরনো জাহেলিয়াতের বিধি-বিধান এবং নতুন-পুরনো সব তাগুতি ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুখ ফিরিয়ে ইসলামী বিধি-বিধানের আনুগত্য করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী তাদের বিচার নিষ্পত্তি করো, তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ না করো এবং তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও, যাতে আল্লাহ যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তারা তার কিছু থেকে তোমাকে বিচ্যুত না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখো যে কোনো কোনো পাপের কারণে আল্লাহ তাদের বিপদাপন্ন করতে চান এবং মানুষের মধ্যে অনেকেই তো সত্যত্যাগী। তবে কি তারা জাহেলিয়াতের বিধি-বিধান কামনা করে? বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধান দানে আল্লাহর চেয়ে কে শ্রেষ্ঠতর?’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৯-৫০)</p> <p>অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের বিবাদ-বিসংবাদের বিচারভার তোমার ওপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে মেনে নেয়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৬৫)</p> <p>কোনো মুসলিম ভূখণ্ডে শাসকদের জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষেত্র হচ্ছে, যেখানে কোরআন-সুন্নাহ নিশ্চুপ এবং ইজমায়ে উম্মত ও খুলাফায়ে রাশেদিনের ঐকমত্যপূর্ণ ফায়সালায় যার নজির নেই। অন্য ভাষায়, নব উদ্ভূত প্রসঙ্গগুলো, বৈধ ক্ষেত্রগুলো এবং ব্যবস্থাপনাগত বিষয়াদি—এই তিনটি ক্ষেত্রেই মুসলিম শাসকদের আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হতে পারে এবং এর অবকাশও তাদের আছে। আর এর প্রথমটি অর্থাৎ নব উদ্ভূত প্রসঙ্গগুলোর বিধানও সমসাময়িক ফকিহদের ওপর ন্যস্ত করা অপরিহার্য।</p> <p>যেসব বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট ও সুনির্ধারিত নির্দেশনা আছে, সেখানে হুবহু ওই নির্দেশনার অনুসরণ করা এবং তা কার্যকর করা জরুরি। এসব বিষয়ে নতুন আঙ্গিকে বিন্যাস ও সংকলনের কাজ হতে পারে, কিন্তু তা পরিবর্তন-পরিবর্ধনের কোনো সুযোগ নেই। তদ্রূপ সেসব থেকে বিমুখ হয়ে আলাদা আইন প্রণয়ন কিংবা তার স্থলে মানবরচিত (যে-ই হোক এর রচয়িতা) আইন গ্রহণের কোনো অবকাশ নেই।</p> <p>হ্যাঁ, কেউ ওই শরিয়তবিরোধী কাজ করেও যদি নিজেকে অপরাধী মনে করে, অন্তরে আল্লাহর প্রতি, রাসুল ও কোরআনের প্রতি, আল্লাহর বিধান ও শরিয়তের প্রতি ঈমান থাকে, আর এই উপলব্ধি থাকে যে আল্লাহর বিধান অনুসারেই রাজ্য পরিচালনা করা ফরজ, এতেই আছে কল্যাণ, কিন্তু ঈমানি কমজোরির কারণে আমি তা করতে পারছি না; তাহলে অন্তরে ঈমান থাকার কারণে এবং ওই হারাম কাজে নিজেকে অপরাধী মনে করার কারণে তার ওপর কাফির-মুনাফিকের হুকুম আরোপিত হবে না।</p> <p>পক্ষান্তরে অবস্থা যদি এই হয় যে আল্লাহর বিধান তার পছন্দ নয়, ইসলামকে সে ঘর ও মসজিদে আবদ্ধ রাখতে চায়, জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের নেতৃত্বে তার ঈমান নেই, আসমানি বিধি-বিধানের ওপর মানবরচিত আইনের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই, তার এই কর্ম ও অবস্থান সরাসরি কুফর। আল্লাহর নির্দেশ—‘হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করো তবে তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসুলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী; কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে তা পেশ করো আল্লাহ ও রাসুলের কাছে। এটাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর। তুমি তাদের দেখো নাই, যারা দাবি করে যে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং শয়তান তাদের ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। তাদের যখন বলা হয় আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দিকে এবং রাসুলের দিকে আসো, তখন মুনাফিকদের তুমি তোমার থেকে মুখ একেবারে ফিরিয়ে নিতে দেখবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৯-৬১)</p> <p>‘তাগুতে’র অর্থ আল্লাহর ওই বিদ্রোহী বান্দা, যে আল্লাহর মোকাবেলায় নিজেকে বিধানদাতা মনে করে এবং মানুষের ওপর তা কার্যকর করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে কোনো তাগুত ব্যক্তি বা দলের বানানো আইন হচ্ছে ইসলামের বিপরীতে ভিন্ন ‘ধর্ম’, যা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করা ছাড়া ঈমান সাব্যস্ত হয় না।</p> <p>আল্লাহকে হাকিম ও বিধানদাতা মেনে নিতেই দ্বিধা ও সংকোচ কিংবা অস্বীকৃতি থাকে, রাজনীতি ও রাজ্য চালনায় আসমানি বিধানের ‘অনুপ্রবেশ’ কেন—এই যদি হয় মনের কথা তাহলে নিশ্চিত বুঝতে হবে, সে ইসলামের গণ্ডি থেকে খারিজ। (ঈমান সবার আগে, পৃষ্ঠা : ১৪)</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/05 May/16-05-2019/Kalerkantho_19-05-16-10.jpg" /></p> <p><strong>ইসলামের বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা করা</strong></p> <p>আকাইদ ও আহকামগুলোর কোনো একটিরও এমন কোনো ব্যাখ্যা করাও সরাসরি কুফর, যার দ্বারা তার প্রতিষ্ঠিত অর্থই বদলে যায়। ঈমানের বিষয়গুলোর ওপর প্রতিষ্ঠিত অর্থেই ঈমান আনতে হবে। নিজের পক্ষ থেকে সেগুলোর কোনো অর্থ নির্ধারণ করে, কিংবা কোনো বেদ্বিনের নব উদ্ভাবিত অর্থ গ্রহণ করে ঈমানের দাবি করা সম্পূর্ণ অর্থহীন ও সুস্পষ্ট মুনাফেকি।</p> <p>যেখানে কোনো বিধান বা বিশ্বাসের অর্থ ও মর্ম আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকে অসংখ্য মুমিনের সুসংহত সূত্রে প্রজন্ম পরম্পরায় প্রবাহিত হয়ে আসে এবং যাতে প্রতি যুগে মুসলিম উম্মাহর ইজমা ও ঐকমত্য বিদ্যমান থাকে, সেখানে ভিন্ন ব্যাখ্যার অবকাশ কোথায়? ওখানে ভিন্ন ব্যাখ্যার অর্থ ওই অকাট্য ও প্রতিষ্ঠিত বিষয়কে অস্বীকার করা। যেমন—কেউ বলল, ‘নামাজ সত্য, কিন্তু তা পাঁচ ওয়াক্ত নয়, দুই ওয়াক্ত।’</p> <p>কিংবা বলল, ‘নামাজ সত্য, কিন্তু আসল নামাজ তা নয়, যা মুসল্লিরা মসজিদে আদায় করেন; আসল নামাজ তো মনের নামাজ। যে তা আদায় করতে পারে তার দেহের নামাজের প্রয়োজন নেই।’</p> <p>কিংবা বলল, ‘শরিয়ত তো প্রাচীন যুগের, আজকের উন্নতির যুগে এর সংস্কার প্রয়োজন।’</p> <p>কিংবা বলল, ‘শরিয়ত মানা একটি ঐচ্ছিক ব্যাপার। মানলে ভালো, না মানলেও দোষ নেই।’</p> <p>এসব কুফরি ব্যাখ্যা এবং এজাতীয় আরো অসংখ্য ব্যাখ্যা, যার আবরণে বেদ্বিন-মুলহিদ চক্র দ্বিনের সর্বজনবিদিত বিষয়ের অস্বীকার করে এবং সেই কুফরিকে ঢেকে রাখার অপচেষ্টা করে। আল্লাহ তাআলার এই হুঁশিয়ারি এদের সবার মনে রাখা উচিত, ‘যারা আমার আয়াতকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচরে নয়। শ্রেষ্ঠ কে? যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে, সে? না, যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে থাকবে, সে? তোমাদের যা ইচ্ছা করো; তোমরা যা করো তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা : হা-মীম আসসাজদা, আয়াত : ৪০)</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/05 May/16-05-2019/Kalerkantho_19-05-16-11.jpg" /></p> <p><strong>কিছু কুফরি বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ড</strong></p> <p>রাশিচক্র ও গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব বিশ্বাস করা : ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে রাশিচক্র ও গ্রহ-নক্ষত্রের নিজস্ব কোনো প্রভাব বা ক্ষমতা নেই। সুতরাং ভাগ্য ও শুভ-অশুভ গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে হওয়ার আকিদা রাখা শিরক। (বুখারি, হাদিস : ১২৭)</p> <p>হস্তরেখা বিচার বিদ্যার মাধ্যমে রেখা ইত্যাদি দেখে ভূত-ভবিষ্যতের শুভ-অশুভ সম্পর্কে বিশ্লেষণ দেওয়া এবং এগুলো বিশ্বাস করা কুফরি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৩০)</p> <p>রত্ন ও পাথর ইত্যাদির মাধ্যমে ভবিষ্যতের শুভ-অশুভ সম্পর্কে বিশ্লেষণ দেওয়া ও তা গ্রহণ করা কুফরি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৩৭)</p> <p>কোনো কিছুকে কুলক্ষণ মনে করা : কোনো বস্তু বা অবস্থা থেকে কুলক্ষণ গ্রহণ করা বা কোনো সময়, দিন বা মাসকে অমঙ্গল মনে করা ভ্রান্ত বিশ্বাস। কোরআন হাদিসে প্রমাণিত নেই এরূপ কোনো লক্ষণ বিশ্বাস করা ভ্রান্ত বিশ্বাস। (বুখারি, হাদিস : ৫৭১৭)</p> <p>অমুসলিমদের উপাসনালয়ে গমন ও তাদের পূজা-অর্চনায় অংশগ্রহণ : কোনো মুসলমানের জন্য অমুসলিমদের উপাসনালয়ে গিয়ে তাদের প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করা, মন্দিরে গিয়ে মূর্তিকে সম্মান জানানো এবং পূজা-অর্চনায় অংশগ্রহণ ঈমানবিধ্বংসী কাজ। (তিরমিজি, হাদিস : ১৭৮৫; রদ্দুল মুহতার ৪/২২৩-২২৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৬৯)</p> <p>পীর সাহেবকে বা মাজারে সিজদা করা : পীর সাহেব বা মাজারকে উদ্দেশ করে সিজদা বা মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানানো কুফরি কাজ। (ফাতাওয়ায়ে বায্যাযিয়া ৬/৩৩৩)</p> <p>পর্দা নিয়ে উপহাস করা : শরিয়তের যেসব বিধান অকাট্যভাবে প্রমাণিত বা ধর্মের সর্বজনবিদিত আবশ্যকীয় বিষয়, পর্দার বিধানও তার অন্তর্ভুক্ত। তা নিয়ে উপহাস করা কুফরি। (রদ্দুল মুহতার ৪/২২৩)</p> <p>দাড়ি-টুপি নিয়ে উপহাস : দাড়ি-টুপির উপহাস করা মূলত নবী (সা.)-এর সুন্নত নিয়ে উপহাস। তাই উপহাসকারী ঈমানহারা হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে বায্যাযিয়া ৬/৩৩৭)</p> <p>আলেমদের অপমান ও অবজ্ঞা করা : ইলমের কারণে বা দ্বিনের ধারক-বাহক হওয়ায় উলামায়ে কেরামকে হেয় প্রতিপন্ন করা বা কটাক্ষ করা কুফরি। হ্যাঁ, পার্থিব বিষয়ে তাদের কারো কোনো ব্যক্তিগত কর্মের কারণে কটাক্ষ করার দ্বারা কাফের হবে না। (আলবাহরুর রায়েক ৫/১২৩)</p> <p>কোরআনের অবমাননা কুফরি : কোরআন শরিফের অবমাননা করা বা পুড়িয়ে ফেলা বা ছিঁড়ে ফেলা স্পষ্ট কুফরি। (আলবাহরুর রায়েক ৫/১২০)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ছবি ও ব্যঙ্গচিত্র আঁকা : রাসুলে কারিম (সা.)-এর অবমাননা যেকোনোভাবেই করা মুখে হোক কিংবা ছবি এঁকে হোক কুফরি, বিশেষত নবীজি (সা.)-এর ছবি আঁকাও প্রকাশ্য নবীদ্রোহ। সুতরাং এ ধরনের বেআদব, রাসুলদ্রোহীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা দায়িত্বশীলদের ওপর ফরজ। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৮৬)</p> <p>নবী কারিম (সা.)-এর পর নবুয়তের দাবিদার ও তাঁর অনুসারী কাফের : মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী, তাঁর পর আর কেউ নবী হবে না—এ কথার ওপর ঈমান রাখতেই হবে। যদি কেউ আল্লাহর ওপর ঈমান আনে কিন্তু নবী কারিম (সা.)-কে শেষ নবী হিসেবে না মানে সে কাফের। (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪০)</p> <p>আল্লাহ তাআলা আমাদের ঈমানবিধ্বংসী যাবতীয় বিশ্বাস ও কার্যকলাপ থেকে রক্ষা করুন। আমিন!</p> <p><strong>লেখক : </strong>ফতোয়া গবেষক ও মুহাদ্দিস</p>