<p><strong>সুরা ফাতিহা</strong></p> <p>গোটা কোরআনের অর্থ ও বক্তব্য সংক্ষিপ্তভাবে এই সুরায় উল্লিখিত হয়েছে। ইসলামের মৌলিক ও শাখাগত বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। আকিদা, ইবাদত, শরিয়ত, পরকালে বিশ্বাস ও আল্লাহর গুণবাচক নাম বিবৃত হয়েছে। শুধু আল্লাহর ইবাদত করতে হবে, তাঁর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে এবং তিনিই হিদায়াতের মালিক—এসব বিষয় আলোচিত হয়েছে। আল্লাহর কাছে সহজ-সরল পথ চাওয়ার পদ্ধতি বলে দেওয়া হয়েছে। যারা সত্যপথচ্যুত, তাদের পথ থেকে দূরে থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।</p> <p> </p> <p><strong>সুরা বাকারাহ</strong></p> <p>এটি কোরআনের সর্ববৃহৎ সুরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। ইকরামা (রহ.)-এর মতে, এটি মদিনায় অবতীর্ণ প্রথম সুরা। এই সুরায় মদিনার নতুন সমাজে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সমাজে রাষ্ট্র ও সমাজকে অবিচ্ছিন্নভাবে দেখা হয়েছে। আল্লাহর ওপর ঈমান, অদৃশ্যের ওপর ঈমান, কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং তাতে কোনো সন্দেহ নেই—সূচনাতেই এসব বিষয় আনা হয়েছে। মুমিন ও মুনাফিকের গুণাবলি আনা হয়েছে। ৪৭ থেকে ১২৩ নম্বর আয়াতে বনি ইসরাঈলের নানা অপকর্মের কথা তুলে  ধরা হয়েছে।</p> <p>তারা আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করেছে, ফেরাউনের কবল থেকে আল্লাহর করুণায় রক্ষা পেয়েছে, গো-বৎস পূজা করেছে, আল্লাহকে দেখতে চেয়েছে, নবীদের হত্যা করেছে—এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আহলে কিতাবের পর আহলে কোরআন তথা মুসলমানদের বিশেষ উপদেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে মুসা (আ.) ও মুহাম্মদ (সা.) অভিন্ন উৎস থেকে—ইবরাহিম (আ.)-এর বংশ থেকে এসেছেন। এরপর কিবলা পরিবর্তনের বিষয় আলোচিত হয়েছে। কিছু নেককাজের নমুনা দেখানো হয়েছে। ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান, যেমন—নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, জিহাদ, চান্দ্রমাস, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে। মাতা-পিতা ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পারিবারিক জীবনে চলার সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিয়ে, তালাক, দুগ্ধপানসহ পারিবারিক নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কসম, জাদু, অন্যায় হত্যা, কিসাস, এতিমের সম্পদ গ্রাস করা ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে। মদ, জুয়া, সুদ ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করতে নিষেধ করা হয়েছে। বংশ বিস্তারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এই সুরায় রয়েছে কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত—আয়াতুল কুরসি। রয়েছে কোরআনের সর্বশেষ আয়াত। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার অল্প কিছুদিন পরই রাসুলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকাল করেন। সেটি হলো এই সুরার ২৮১ নম্বর আয়াত। এই সুরায় রয়েছে কোরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত, যেখানে ঋণ দেওয়ার বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। যেসব বিষয়ে ঈমান আনা জরুরি, শেষের দিকে সে বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে তাওবা ও দোয়ার মাধ্যমে।</p> <p> </p> <p><strong>সুরা আলে ইমরান</strong></p> <p>এ সুরায় আকিদা ও শরিয়তের বিধি-বিধান দুটি বিষয়ই আলোচিত হয়েছে। আকিদার ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ, নবুয়ত, কোরআনের সত্যতা, কোরআন সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় দূর করা হয়েছে। এই সুরায় এই ঘোষণা রয়েছে যে ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। এই সুরায় ইহুদি-খ্রিস্টানদের সঙ্গে মৌলিক বিরোধ ও বিরোধপূর্ণ বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। আর বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে এই সুরায় হজ, জিহাদ, সুদ, জাকাত এবং বদর ও ওহুদ যুদ্ধ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।</p> <p>মুনাফিকদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। দুটি নির্দেশনা দিয়ে সুরাটি শেষ হয়েছে। এক. আসমান ও জমিনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুই. বিপদাপদে ও জিহাদে ধৈর্য ধারণ করতে বলা হয়েছে।</p> <p> </p> <p><strong>সুরা নিসা</strong></p> <p>এর আগের সুরার নাম সুরা আলে ইমরান। এটি পরিসমাপ্ত হয়েছে তাকওয়ার নির্দেশের মাধ্যমে। আলোচ্য সুরা নিসা শুরু হয়েছে তাকওয়ার নির্দেশনার মাধ্যমে। এভাবে উভয় সুরার মধ্যে সামঞ্জস্য বিদ্যমান। এই সুরার নাম সুরা নিসা। নিসা শব্দের অর্থ নারী। পবিত্র কোরআনে নারীদের নামে একটি বিশেষ সুরার নামকরণ করা হয়েছে, যদিও পুরুষদের নামে কোনো সুরা নেই। এর মাধ্যমে নারীর মর্যাদা বোঝা যায়। এই সুরায় মানুষের দুটি পারিবারিক বলয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে—ব্যক্তিগত পরিবার ও সামাজিক পরিবার। মানবসমাজ ও মুসলিমসমাজের চিত্র এখানে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে এই চিত্র থেকে বোঝা যায়, মানুষ অভিন্ন উৎসমূল থেকে জন্মগ্রহণ করেছে এবং তারা একই পরিবারভুক্ত। এই সুরার বেশির ভাগ অংশে নারীদের ধর্মীয় বিধি-বিধান নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের অর্থনৈতিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। উত্তরাধিকার সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে। মোহরানার কথা বলা হয়েছে। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের ধরন, কার সঙ্গে বিয়ে বৈধ এবং কার সঙ্গে বিয়ে বৈধ নয় ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।</p> <p> </p> <p><strong>সুরা মায়িদা</strong></p> <p>সুরা মায়িদার আগের সুরা হলো সুরা নিসা। সুরা নিসায় পারিবারিক ও সামাজিক বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিবাহ, উত্তরাধিকার ও অসিয়ত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছিল। এগুলো হলো সামাজিক চুক্তি। আলোচ্য সুরা মায়িদার সূচনাও হয়েছে চুক্তি ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে। এভাবেই দুটি সুরা সম্বন্ধযুক্ত হয়েছে। এই সুরায় কয়েকটি ঘটনা ও বিভিন্ন বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষত এখানে চুক্তি বাস্তবায়ন, আহলে কিতাবের সঙ্গে বিয়ে, মৃত্যুর সময় অসিয়ত, জবাইকৃত বস্তু খাওয়ার বৈধতা, শিকারের বৈধতা, অজু-গোসল থেকে পবিত্রতা, তায়াম্মুম, মদ-জুয়ার অবৈধতা, মুরতাদের শাস্তি, চুরি-ডাকাতির শাস্তি, ইহুদি-খ্রিস্টান, মূর্তিপূজারি ও মুনাফিকদের দাবি খণ্ডন ইত্যাদি বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। তাফসিরবিদদের কেউ কেউ বলেন, সুরা মায়িদার মধ্যে এমন ১৮টি বিধান আছে, যা অন্য কোনো সুরায় নেই।</p> <p>(চলবে)</p>