<p>মা-বাবা কত ছোট শব্দ। কিন্তু এ দুটি শব্দের সঙ্গে কত যে আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা রয়েছে, তা পৃথিবীর কোনো মাপযন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। মা-বাবা কত কষ্ট করেছেন! সন্তানের জন্য নিজে না খেয়ে থেকেছেন। ভালো পোশাকও পরিধান করেননি। ঈদে সন্তানকে নতুন পোশাক কিনে দিয়েছেন; কিন্তু নিজের জন্য কিছুই কেনেননি। সন্তান দূরে আছে, তাই তাঁরা ভালো কোনো খাবারও খাননি। সন্তান অসুস্থ হয়েছে; তাঁরা স্বীয় ঘুম-বিশ্রাম ছেড়ে দিয়েছেন। সেই মা-বাবা যাদের চলে গিয়েছেন, তারাই বোঝে মা-বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা-বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল! মনে হলেই বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে! চোখ থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরে! সেই মা-বাবার জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে।</p> <p><strong>সন্তানের কয়েকটি করণীয়</strong></p> <p><strong>বেশি বেশি দোয়া করা :</strong> মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর তাঁদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। মহান আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার রব, তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবকালে (দয়া-মায়া করে) লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৪)</p> <p>তাঁদের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃতু্যুর পর কোনো বান্দার মর্যাদা যখন বৃদ্ধি করা হয় তখন সে বলবে, হে আমার রব, আমি তো এত মর্যাদার আমল করিনি, কিভাবে এ আমল এলো? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছ। (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৬)</p> <p><strong>মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া :</strong> মা-বাবা বেঁচে থাকতে কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো ওপর জুলুম করে থাকলে অথবা কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে তাঁদের পক্ষ থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া অথবা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৮)</p> <p><strong>দান-সদকা করা :</strong> মা-বাবার মাগফিরাত কামনায় ও তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধির নিয়তে অভাবগ্রস্ত লোকদের খোঁজে খোঁজে দান-সদকা করা। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার ধারণা, তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে দান-সদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করলে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন। (বুখারি, হাদিস : ২৭৬০)</p> <p>তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সদকায়ে জারিয়া বা প্রবাহমান ও চলমান সদকা প্রদান করা; যেমন—মানুষের সুবিধার জন্য রাস্তা তৈরি করা, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা, মসজিদ নির্মাণ করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা ইত্যাদি।</p> <p><strong>মা-বাবার পক্ষ থেকে রোজা রাখা :</strong> যদি মা-বাবার কোনো রোজা কাজা হয়ে থাকে, তাহলে তাঁদের ইন্তেকালের পর তাঁদের পক্ষ থেকে রোজা রাখা। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল এমতাবস্থায় যে তার ওপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার অভিভাবক রোজা রাখবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯৫২)</p> <p>তাঁদের পক্ষ থেকে হজ বা ওমরাহ পালন করা। তাঁদের নিয়তে সব সময় কিছু যেকোনো ধরনের নফল ইবাদত করা। এর দ্বারা তাঁরা উপকৃত হবেন, তাঁদের আত্মা খুশি হবে। আমরা তাঁদের রুহানি ফয়েজ লাভ করব। (বুখারি, হাদিস : ১৮৫২)</p> <p><strong>ঋণ পরিশোধ করা :</strong> মা-বাবার কোনো ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করার চেষ্টা করা। নবীজি (সা.) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে যায় যতক্ষণ না তা পরিশোধ করা হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪১৩)</p> <p><strong>কবর জিয়ারত করা :</strong> তাঁদের কবর জিয়ারত করা। এর মাধ্যমে সন্তান ও মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। অতঃপর মুহাম্মদের মায়ের কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৪)</p> <p><strong>ভালো কাজগুলো বহাল রাখা :</strong> মা-বাবা যেসব ভালো কাজ চালু করে গেছেন, তা যেন অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৭৬)</p> <p><strong>ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা :</strong> মা-বাবা কোনো ভালো কাজের ওয়াদা করে গেলে যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। তবে কোনো গুনাহর কাজ চালু করে থাকলে তা বন্ধ করার বা শরিয়তসম্মতভাবে সংশোধন করার চেষ্টা করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৪২)</p> <p><strong>মা-বাবার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা :</strong> মা-বাবার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৪২)</p> <p><strong>মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা :</strong> মা-বাবার বন্ধুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাঁদের দেখতে যাওয়া ও সাধ্যমতো হাদিয়া দেওয়া। (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪১)</p> <p><strong>লেখক :</strong> মুহাদ্দিস, জামিয়া আম্বর শাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা</p>
