<p>মহানবী (সা.)-এর বয়স তখন ১৪ থেকে ১৫। সে সময় আরবে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তার নাম ‘হরবুল ফুজ্জার’ বা অন্যায় সমর। সম্ভবত ৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে আরবের বিখ্যাত ওকাজ মেলার ঘোড়দৌড়, জুয়াখেলা ও কাব্য প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে পবিত্র জিলকদ মাসে মক্কার কুরাইশ ও হাওয়াজিন গোত্রের মধ্যে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। আরবে পবিত্র জিলকদ মাস ছিল শান্তির মাস। এই মাসে আরবদেশে সব ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। তাই জিলকদ মাসে শুরু হওয়া এই যুদ্ধকে ‘হরবুল ফুজ্জার’ বা অন্যায় সমর বলা হয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর স্থায়ী এউ যুদ্ধের ভয়াবহতা বালক মুহাম্মদ (সা.)-এর কোমল হৃদয়ে রেখাপাত করে। এই যুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এই যুদ্ধ যখন শেষ হয়, তখন মহানবী (সা.)-এর বয়স ছিল ২০ বছর। মহানবী (সা.) তাঁর চাচার সঙ্গে এই যুদ্ধে হাজির হয়েছিলেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড)</p> <p>এই যুদ্ধের বীভৎসলীলা দেখে বালক মুহাম্মদ (সা.) অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন এবং আরববাসীদের এরূপ ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে ভাবতে থাকেন। আরবে শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি একটি শান্তিসংঘ গঠনের উদ্যোগ নেন। ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে সমমনা নিঃস্বার্থ কিছু উৎসাহী যুবক ও পিতৃব্য জুবাইরকে নিয়ে তিনি এই শান্তিসংঘ গঠন করেন। এই সংঘের চারজন বিশিষ্ট সদস্য ফজল, ফাজেল, ফজায়েল ও মোফাজ্জেলের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘হিলফুল ফুজুল’। এই সংঘের কর্মসূচি ছিল : ১. দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা, ২. বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সদ্ভাব ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করা, ৩. অত্যাচারিতকে অত্যাচারীর হাত থেকে রক্ষা করা, ৪. দুর্বল, অসহায় ও এতিমদের সাহায্য করা, ৫. বিদেশি বণিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করা এবং ৬. সর্বোপরি সব ধরনের অন্যায় ও অবিচার অবসানের চেষ্টা করা।</p> <p>এই শান্তিসংঘ প্রায় ৫০ বছর স্থায়ী হয়েছিল। এভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত হিলফুল ফুজুল বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কল্যাণী সেবাসংঘের মর্যাদা লাভ করে। আর এর মধ্য দিয়ে মহানবী (সা.) নবী হওয়ার আগেই শান্তির অগ্রদূত হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করেন।</p> <p>গ্রন্থনা : <strong>আহমাদ রাইদ</strong></p>