সিপিডির আলোচনায় বক্তব্য দেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। ছবি : কালের কণ্ঠ
আমদানীকৃত জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি উৎপাদনের দিকে নজর দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আলোচনায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গ্যাসের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার পরও অনুসন্ধান ও উত্তোলনে নেই সরকারি উদ্যোগ। এর ফলে বিদেশ থেকে বেশি দামে জ্বালানি আমদানি করতে হচ্ছে। বরাবরের মতোই ২০২২-২৩ প্রস্তাবিত অর্থবছরেও গ্যাস উৎপাদনের বিষয়টি পেছনে রেখে বিদ্যুতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় বক্তারা আরো বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমস্যা সমাধান করতে হলে আগে প্রাথমিক জ্বালানির সমস্যা সমাধান করতে হবে। বর্তমানে দেশের উৎপাদিত মোট গ্যাসের ৫৫ শতাংশই আসছে শেভরনের একটি গ্যাসক্ষেত্র (বিবিয়ানা) থেকে। কোনো কারণে এই গ্যাসক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে পুরো দেশের বেশির ভাগ শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এই বিষয়টি সরকারকে এখনই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু বাপেক্সের মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান না করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানানো উচিত।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জ্বালানি তেল, এলএনজি ও কয়লা আমদানির ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত চাপের মুখে পড়েছে। ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির পরেও ব্যয় সমন্বয় করা কঠিন। বাড়তি উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন বর্তমান সরকারের অনেক বড় অর্জন। পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থেকে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের সক্ষমতা এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে সরকার অনেক পিছিয়ে। আমাদের দেশীয় গ্যাস ধীরে ধীরে কমে আসছে। স্বাধীনতার আগ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্যাসের উৎপাদন ক্রমাগত হারে বাড়ছিল। ২০১৬ সালের পর থেকে এটা কমছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় বিদেশি প্রতিষ্ঠান জরিপ চালিয়ে বাংলাদেশে প্রচুর গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিএস যৌথ জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে ৩২ টিসিএফ গ্যাস এখনো উত্তোলন করা যাবে। নরওয়ের একটি সংস্থা বলেছে, ৩২ টিসিএফ না ৪২ টিসিএফ গ্যাস এখনো রয়ে গেছে। সম্প্রতি আরেকটি সংস্থা বলছে, ৪০ টিসিএফ গ্যাস আছে। কেউ বলেনি বাংলাদেশে গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু একটা কথা উঠেছে দেশে গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, অন্য পন্থায় যেতে হবে।
ম. তামিম বলেন, এবারের বাজেটেও বিদ্যুতের জেনারেশনে বরাদ্দ বেশি রাখা হয়েছে; কিন্তু এবার বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। বাজেটে দেশীয় গ্যাস উৎপাদনেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সরকারকে আগে প্রাথমিক জ্বালানির সমস্যা সমাধান করতে হবে, তারপর বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করতে হবে।
মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘গ্যাসের অভাবে অন্য জ্বালানি দিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়। যদি তেলভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র না থাকত তাহলে প্রচুর লোড শেডিং হতো। ভারতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভালো উৎস আছে, বাংলাদেশে সেটা নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য আমরা সব দরজা খুলে রেখেছি। ’
ইমরান করিম বলেন, সরবরাহ সিস্টেম ঘাটতি রয়েছে, সে কারণে লোড শেডিং হচ্ছে। বিদ্যুতে আমাদের সত্যিকারের ক্যাপাসিটি ১৬ হাজার মেগওয়াট। ১৬ হাজার মেগাওয়াট কিছু নয়। আমাদের অন্তত ২০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। ’