ভারত, আফ্রিকার কিছু দেশ, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো সোনা পরিশোধন করে। বাংলাদেশে মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের এই শোধনাগার আছে। দেশে শোধনাগারের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি রপ্তানি খাতে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে সোনার বার ও কয়েন রপ্তানি করতে চায় সরকার। এ জন্য অপরিশোধিত সোনা তথা আকরিক বা আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার।
এতে ব্যবসায়ীরা আকরিক সোনা শোধন করে বার ও কয়েন তৈরি করতে পারবেন। তবে রপ্তানি করতে চাইলে অবশ্যই নিজস্ব শোধনাগার থাকতে হবে। স্বর্ণ নীতিমালা সংশোধন করে এসব অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বিদেশি আয় বাড়বে, অন্যদিকে শোধনাগার স্থাপনের কারণে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আজ অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব তোলা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সোনা রপ্তানি করতে চাই। এ জন্য সংশোধিত নীতিমালায় নতুন করে অপরিশোধিত বা আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির বিষয়টি সংযোজন করা হয়েছে। এটি সোনা রপ্তানির প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপে নিজস্ব শোধনাগারকে জোর দেওয়া হবে।’ এতে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সূত্র মতে, ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু সোনার বার ও অলংকার আমদানির বিধান থাকলেও অপরিশোধিত সোনা বা আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির বিষয় উল্লেখ নেই।
ব্যবসায়ীরা নিজস্ব শোধনাগারে অপরিশোধিত সোনা শোধন করে বার ও কয়েন উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণ নীতিমালা সংশোধন করে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ‘স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী, অপরিশোধিত সোনা বা আংশিক অপরিশোধিত সোনা আমদানি ও পরিশোধন প্লান্ট স্থাপন করা গেলে শিল্পায়নের এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। বিশ্বের ‘গোল্ড রিফাইনার্সের’ তালিকায় যুক্ত হবে বাংলাদেশের নাম। এ ছাড়া বিনিয়োগ আকর্ষণ ও প্রযুক্তি আহরণসহ দক্ষ জনবলের সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি দেশে সোনার চাহিদা পূরণ হবে এবং আমদানি প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করবে।
ব্যবসায়ীরা যাতে সোনা পরিশোধনাগার স্থাপন ও পরিচালনায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করেন সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি মানসম্মত পরিচালন পদ্ধতি তৈরি করবে। স্বর্ণমান এবং বিশুদ্ধতা সনদ দেবে বিএসটিআই অথবা এই সংস্থার স্বীকৃত কোনো অ্যাক্রেডিটেড সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলেই আমদানি করা অপরিশোধিত বা আংশিক পরিশোধিত সোনা থেকে তৈরি করা কয়েন বা বার রপ্তানি করতে পারবেন না। রপ্তানি করতে চাইলে অবশ্যই নিজস্ব শোধনাগার থাকতে হবে। অনুমোদিত ডিলারদের নিজস্ব ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে সোনা বা সোনার বার আমদানিতে কোনো জামানত লাগবে না।
প্রস্তাবিত নীতিমালার সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনীতি তথা বাণিজ্যনীতি ও শিল্পনীতির গুরুত্বপূর্ণ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাই প্রস্তাবিত নীতিমালাটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে তোলা হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মন্তব্য