মধু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কুষ্টিয়ার মামুন। তা ছাড়া বেশ কয়েকজনের কর্মসংস্থানও করেছেন। এলাকার মানুষ সহজেই তাঁর কাছ থেকে খাঁটি মধু পাচ্ছে। এই মধু অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানিও হচ্ছে। দিন দিন মামুনের এই মধু আহরণ পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে। সরিষাক্ষেতে মৌমাছির বিচরণে পরাগায়ণ হচ্ছে। ফলে মধু সংগ্রহের এই পদ্ধতিতে সরিষার ফলনও বাড়ছে। কিন্তু সরকারি পৃষ্টপোষকতা না থাকায় এই মধু চাষিরা আশানুরূপ উন্নতি করতে পারছে না। মাত্র চারটি বাক্স নিয়ে মধু মামুনের পথচলা শুরু হলেও এখন তাঁর খামারে তিন শতাধিক মধুর বাক্স রয়েছে। এখান থেকে প্রতিবছর ১০ টনেরও বেশি মধু অহরণ করছেন তিনি।
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির আশা না করে কারিগরি কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই মধুর বাণিজ্যিক চাষের দিকে মনোযোগ দেন মামুন। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গেটপাড়ার মামুন-অর-রশিদ মামুন ১৯৯৭ সালে দুই হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে মাত্র চারটি মধুর বাক্স কিনে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করেন। প্রথম দিকে খুব একটা লাভ না হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। এরপর ধীরে ধীরে তাঁর খামারে বাক্সের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লাভের মুখও দেখতে থাকেন। বর্তমানে এই মধু আহরণকে বাণিজ্যিকভাবেই নিয়েছেন মামুন। মধুর খামার করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। মামুনকে এলাকার সবাই এখন ‘মধু মামুন’ নামে ডাকে। মধুর খামার করে মামুন ভাগ্যবদল করতে পেরেছেন নিজের এবং পরিবারেরও।
কুষ্টিয়ার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষাক্ষেত। নভেম্বর মাস থেকেই কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার গেটপাড়া, ধূবাইল ও কুষ্টিয়া সদরের বিত্তিপাড়া এলাকায় সরিষাক্ষেতে মামুন ৩০০টি মৌ চাষের বাক্স বসিয়েছেন। বাক্স থেকে মৌমাছির দল আশপাশের সরিষাক্ষেতে উড়ে উড়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সের মৌচাকে জমা করছে। সেখান থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হচ্ছে মানসম্মত সুস্বাদু মধু। এ কাজে মামুনের সহযোগী হিসেবে বেশ কয়েকজনের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৭ সালে দুই হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে মাত্র চারটি মধুর বাক্স কিনে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করি। ১৯৯৮ সালে মাস্টার্স পাস করে চাকরির আশা না করে মধুর বাণিজ্যিক চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার খামারে ১৫ জন কর্মচারী সারা বছর মধু উৎপাদন করে। ২০১৫ সাল থেকে বছরে নিয়মিত ১০ টনের বেশি মধু পেয়ে আসছি। এ বছরও একই পরিমাণ পাওয়ার আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘শুধু কুষ্টিয়ার মিরপুরেই না, আমি নাটোরের গুরুদাসপুর, চলনবিল, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন স্থানের খামারের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করি। নভেম্বর থেকে কুষ্টিয়ার মিরপুর ও বিত্তিপাড়া এবং নাটোরের চলনবিলের সরিষা ফুলের মধু, এরপর কালিজিরা ফুলের মধু এবং সব শেষে শরীয়তপুরের কালিজিরা ফুলের মধু ও নাটোরের গুরুদাসপুরের লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ করি।’
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘এ জেলার মডেল মৌ খামারি মামুন মধু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাঁর এই সাফল্যে এলাকার অনেকেই মধু চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আমরা তাঁর সাফল্যের কারণে মধু পরিবহনের জন্য কৃষি অফিস থেকে ভর্তুকিতে পিকআপ ভ্যানের ব্যবস্থা করেছি।’
মন্তব্য